![নিউজিল্যান্ড শিকারে সিলেটতত্ত্ব!](uploads/2023/12/24/1703401402.BD- NZ-SY-Niloy.jpg)
বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড সফরে গেলে ভক্তদের খুব একটা খেলা দেখার সুযোগ হয় না সময়ের জটিলতার কারণে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেকেই। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিশ্চিত পরাজয় ধরে নিয়ে সমর্থকদের খেলা দেখার আগ্রহ অবস্থান করে তলানিতে। তবে গতকালের সকালটা ছিল ভিন্ন। এ ভিন্ন সকালের অনুভূতি ঠিক কতজন নিতে পেরেছেন তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ থেকেই যায়।
সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়াতে এই ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ থাকার কথা নয় কারওই। তাই শীতের সকালের আরামের ঘুম ত্যাগ করে খেলা দেখা পায় কম গুরুত্ব। কিন্তু বাংলাদেশ দল সকাল সকাল বাংলাদেশের মানুষকে একটু অবাকই করে দিয়েছে। হারের বৃত্তে ঘুরতে থাকা দলটা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশনে তুলে নিয়েছে ৯ উইকেটের এক বিশাল জয়। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা ১৮ জারের পর টম লাথামদের বিপক্ষে তাদের মাঠে এটিই টাইগারদের প্রথম জয়। যে জয়কে অনেকেই ‘ঐতিহাসিক’ তকমা দিতে চাচ্ছেন। যা কিছু প্রথম তা তো ঐতিহাসিক হবেই।
নেপিয়ারে স্বাগতিকদের ১০ উইকেটের সব কটিই পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। যার শুরুটা করেছিলেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। যিনি বাংলাদেশের হয়ে জিতেছেন ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শিরোপা। রাচিন রবীন্দ্র, হেনরি নিকোলস ও টম ব্লুন্ডেলের উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ম্যাচ জয়ে রাখেন সামনে থেকে ভূমিকা। তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়কও তিনি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তারই আরেক সতীর্থ শরীফুল ইসলামের শিকারও ৩ উইকেট। শেষদিকে সৌম্য সরকারও নেন ৩টি ও মোস্তাফিজ ১টি।
তানজিম সাকিবের ম্যাচ জেতানো এমন পারফরম্যান্স ২০২২ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্ট জয়ের মধুর স্মৃতিটা আরেকবার বাংলাদেশি সমর্থকদের মনকে চাঙ্গা করে তুলেছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম কোনো ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল গত বছরই। যে জয়ের নায়কও ছিলেন পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরী। তার বাড়িও সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায়। এবাদত আবার পরিচিত সিলেটের রকেট নামে। তার রকেটে চড়েই সেই ঐতিহাসিক টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে তার নেওয়া ৬ উইকেটেই কিউইদের বড় রানের লিড নেওয়া থেকে দূরে রাখতে পেরেছিলেন মুমিনুলরা। ৮ উইকেটের জয় পেয়েছিল টাইগাররা। ব্ল্যাকক্যাপসদের মাটিতে তাদের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডেতে প্রথম দুই জয়ে টাইগারদের মূল অস্ত্র সিলেটি পেসারদ্বয়।
নিউজিল্যান্ডকে বধ করার মিশনে সিলেটের প্রভাবকে দূরে রাখা যে মুশকিল সেটি তো চলতি মাসে ঘরের মাঠে শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজ দেখলেও বোঝা যায়। তাইজুল ইসলাম যে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের স্মৃতি ফিরিয়েছিল সিরিজের প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট নিয়ে সেটির ভেন্যুও ছিল আবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তাইজুলের বাড়ি রাজশাহী বিভাগের নাটোরে হলেও সিলেটের মাঠেই টিম সাউদিদের নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন তিনি। সে টেস্টে সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেটার জাকির হোসেন দলে থাকলেও বলার মতো কিছু করতে পারেননি তিনি। কিন্তু ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের ভেন্যু সিলেট থাকায় নিউজিল্যান্ড শিকারে সিলেটের নামটি চলে আসছে আপনা আপনিই।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম জয় এসেছিল ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২৬ রানে। ঐতিহাসিক এই জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়রের বাড়িও ছিল সিলেটে। প্রথম ইনিংসে ২৬ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ২২.২ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে তিনি হয়ে উঠেন ম্যাচের নিয়ামক।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সিলেট বিভাগের ক্রিকেটারদের ভূমিকা বেশ বড়। একের পর এক ক্রিকেটার উঠে আসছেন ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি থেকে। এবাদত হোসেন, তানজিম সাকিব, জাকির হোসেন ছাড়াও আবু জাহেদ চৌধুরী রাহী, নাসুম আহমেদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, রেজাউর রহমান রাজা সবাই উঠে এসেছেন সিলেট বিভাগ থেকেই।
একটা সময় দেশের খেলোয়াড় উঠে আসার জন্য সবচেয়ে পরিচিত জায়গা ছিল খুলনা বিভাগ। যেখান থেকে একে একে উঠে এসেছেন সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, আব্দুর রাজ্জাক, আল-আমিন হোসেন, ইমরুল কায়েস, তুষার ইমরান, হাবিবুল বাশার সুমনরা। এদের অধিকাংশই ছিলেন জাতীয় দলের বড় পারফর্মার। সেই হাওয়া এখন লেগেছে সিলেটের পালে?