![নেপালের ক্রিকেট প্রেম দেখল বিশ্ব](uploads/2024/06/06/nepal--Niloy=ok-1717674382.jpg)
‘আমরা স্টেডিয়ামে ৯০ শতাংশ দর্শক আশা করছি’- এমনটা বলেছিলেন নেপালের অধিনায়ক রোহিত পাওদেল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে চলমান বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচের আগে। তার সেই আশা রূপ নিয়েছে বাস্তবেও। মাঠে এসে অধিনায়কের প্রত্যাশা পূরণ করেছে নেপাল ক্রিকেটের সমর্থকরা। যদিও ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে বিজয়োল্লাস করা হয়নি ক্রিকেটারদের। তবে নেপালের ক্রিকেট প্রেম দেখেছে বিশ্ব।
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে গ্যালারি দেখে বোঝার উপায় ছিল না, খেলা কি কাঠমান্ডুতে হয়েছে নাকি টেক্সাসের ডালাস শহরে। বেশ কয়েকবার তো এমনও মনে হয়েছে নেপালই যেন আয়োজক। কার্যত ডালাসে বসবাস করা ১৫ হাজার নেপালি নাগরিকের তুলনায় গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতা ছিল অর্ধেকেরও কম। তাতেই নীল সাগরে রূপ নিয়েছিল গ্যালারি। কিছুক্ষণ পরপর যেখানে দেখা মিলছিল মেক্সিকান ওয়েভের। ম্যাচ জিতলেও নেপালের দর্শকরা যে নেদারল্যান্ডসেরও নজর কেড়েছে তা বোঝা গিয়েছে ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া ডাচ বোলার লোগান ফন বিকের কথায়, ‘এটা বলা মুশকিল হয়ে গিয়েছিল যে, ম্যাচ কি নেপালে হচ্ছে নাকি ডালাসে।’
গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সামনে নেপাল করতে পারেনি অতিচমকপ্রদ কিছুই। ব্যাটিংয়ে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হওয়ার পর ম্যাচ হেরেছে ৬ উইকেটের ব্যবধানে। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ মিসের মহড়াও তাদের হারের অন্যতম কারণ। তিনটি ক্যাচ মিস তাদের ছিটকে দিয়েছে ম্যাচ থেকে। নেদারল্যান্ডস ও নেপালের সাদা বলের দুই সংস্করণের জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যানই প্রায় সমান। তাই দর্শকরা জয়ের আশা নিয়েই যে গ্যালারি দখল করেছিলেন তা সহজেই বোধগম্য। ম্যাচ হারলেও মাঠের চারপাশ প্রদক্ষিণ করে সমর্থকদের ভালোবাসা জানিয়েছেন নেপালের ক্রিকেটাররা। দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া এই ভালোবাসাই যেন তাদের দিয়েছে জয়ের আনন্দ। অধিনায়ক রোহিত পাওদেল বলেন, ‘আমি তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। অনুভূত হচ্ছিল আমরা নেপালে খেলছি। দল হিসেবে আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ তাদের আমাদের সমর্থন করার জন্য।’
বলা হয়ে থাকে, দর্শক খেলার প্রাণ। ফাঁকা গ্যালারিতে নাকি শতক হাঁকিয়েও আনন্দ পান না খেলোয়াড়রা। কিন্তু নেপালের দর্শকরা কেবল গ্যালারি নয়, মাতিয়েছে রাজধানী কাঠমান্ডুর পিচ ঢালা পথও। মঙ্গলবার রাতটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল কেবলই নেপালময়। আইসিসি থেকে ক্রিকেট সম্পর্কিত সকল পেজগুলোতে দেখা গেছে নেপালের দর্শকদের জনসমুদ্রের চিত্র। কাঠমান্ডুর রাস্তায় এক হয়ে বড় পর্দায় খেলা দেখা সামনে এনেছে ক্রিকেটের প্রতি দেশটির মানুষের অগাধ ভালোবাসা।
ম্যাচটি শুরুর আগে ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্যেও দেখা গেছে তার ছাপ। অনিল কাটওয়াল নামের এক সমর্থক লিখেন, ‘১০ বছর হতে চললো চট্টগ্রামের সেই জাদুকারী রাতের, যা পাল্টে দিয়েছে এই খেলার পথ দেশের ভেতর। দেশের হৃদয়ভাঙা ও বেশকিছু স্মৃতি আছে এর মধ্যেই। চলো নেপাল… পুরো দেশ তোমাদের পেছনে আছে।’
বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা প্রথম অংশ নিয়েছিল। প্রথম রাউন্ডে খেললেও জায়গা করতে পারেনি তারা মূলপর্বে। তবে ততটুকু পর্যন্ত আসা এবং চট্টগ্রামে হংকংয়ের বিপক্ষে ৮০ রানের বিশাল জয় তাদের দেশে ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণাটাই বদলে দেয়। এরপর দীর্ঘ এক দশক পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এসেছে তারা, এবার খেলছে মূলপর্বেই।
আইসিসির সহযোগী দেশ হওয়ার পরও হিমালয় কন্যাদের দেশের ক্রিকেটের এই বিশাল উন্মাদনাই হয়তোবা এই বিশ্বকাপে দুয়েকটা দারুণ মুহূর্ত পাইয়ে দিতে সাহায্য করবে। নিজেদের প্রথম আসরে বাংলাদেশের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছিল তারা। এবার সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে ঈদের আনন্দ মাটি করতেই ১৭ জুন বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামবে তারা। অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্যালারিতে সমর্থকরা থাকবে কাঠমান্ডুর আমেজ নিয়ে।
সেন ভিনসেন্টে হতে যাওয়া সেই ম্যাচ কাঠমান্ডুর অনুভূতি দেয় নাকি ঢাকার তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, যেহেতু বাংলাদেশেরও দর্শকের কমতি হয় না বিশ্বের যেখানেই খেলুক না কেন। তাই এখন কেবল অনুমানই করা সম্ভব, উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৭ জুন পর্যন্ত।