ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের সুখ-দুঃখের বিশ্বকাপ

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ১০:০০ পিএম
আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম
বাংলাদেশের সুখ-দুঃখের বিশ্বকাপ
ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেটের বৈশ্বিক বিপ্লবকে অগ্রাধিকার দিয়ে টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটকে আইসিসি পরিচিত করিয়ে দেয় ২০০৪ সালে। নাতিদীর্ঘ এই ফরম্যাটের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের নারী দল। যে ম্যাচে কিউই নারীর জয়লাভ করে ৯ রানে। এই ফরম্যাটে পুরুষ দলের প্রথমেও কিন্তু রয়েছে নিউজিল্যান্ডের নাম। সংস্করণটির ছেলেদের আন্তর্জাতিক ম্যাচেও প্রথমে মাঠে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। ২০০৫ সালের সেই ম্যাচে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে তারা হেরেছিল ৪৪ রানের ব্যবধানে।

এর প্রায় দুই বছর পর বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে খেলেছিল তাদের প্রথম ম্যাচ। খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই দলের প্রথম সেই লড়াইয়ে মাশরাফির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ৪৩ রানে জিতে শুভ সূচনা করেছিল স্বাগতিকরা। ব্যাট হাতে ২৬ বলে ৩৬ ও বল হাতে তিনি শিকার করেন ১ উইকেট। বছরখানেক পর টি-টোয়েন্টির চতুর্ভুজাকার সিরিজে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচই জিতে এই ফরম্যাটকে নিজেদের করে নেওয়ার বার্তা দেয় বাংলাদেশ।

চার-ছক্কার এই ফরম্যাট ক্রমেই হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তাকে গুরুত্ব দিয়েই ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজন করে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রায় ৫ মাস পর। যার প্রথম আসর বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১২ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত সেই আসরে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার ‘এ’ গ্রুপে পড়ে বাংলাদেশ, যেখানে অন্য দলটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টির ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে ত্রাস হয়ে যাওয়া সেই উইন্ডিজকে উড়িয়েই বাংলাদেশ শুরু করে বিশ্বকাপ যাত্রা। আফতাব-আশরাফুলের ১০৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ৬ উইকেটের ব্যবধানে। যে ম্যাচে ২৩ বলে ফিফটি করে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সুপার এইটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা হাঁকানোর ম্যাচে ১২ বলে ফিফটি করে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন ভারতের যুবরাজ সিং। গ্রুপ পর্বে উইন্ডিজের বিপক্ষে ওই জয়েই আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ পা রাখে সুপার এইটে।

সে বছর বিশ্ব আসরে বাংলাদেশ অনেকটাই স্বপ্নের ভেলায় চড়ে বিচরণ করছিল। একই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও বাংলাদেশ ভারতকে পেছনে ফেলে খেলে সুপার এইটে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি জয় পেলেও, টি-টোয়েন্টির গ্রুপ পর্বে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারতে হয় তাদের বিপক্ষে। বিশ্বকাপের আগে দুই জয় ও বিশ্বকাপের শুরুটা জয় দিয়ে শুরু করে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে অবস্থান করা বাংলাদেশ বাস্তবতায় ফেরে সুপার এইটে। তিন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি আশরাফুলরা। ব্রেট লি হ্যাটট্রিক করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে, যা ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম। বাংলাদেশ হারে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ রানে অলআউট হয়ে হারতে হয় ৬৪ রানে। নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেও হার মানে ৪ উইকেটে। প্রথম বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের এই ফরম্যাটে সামর্থ্যের চিত্রটা সামনে চলে আসে। যদিও সেই আসরই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপ হিসেবেই বিবেচিত হয়। না হয়ে উপায় কী? এরপর তো আর কখনোই খেলার সুযোগ হয়নি দ্বিতীয় রাউন্ডে। বেশ কয়েকবার তো খেলতে হয়েছে প্রাথমিক পর্বেও। পরের তিন বিশ্বকাপে আর কোনো ম্যাচ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০০৯ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারের পর হারতে হয় আয়ারল্যান্ডের কাছেও। অথচ গ্রুপে আয়ারল্যান্ড থাকায় আশা করা হয়েছিল বাংলাদেশ এবারও জায়গা করে নিবে সুপার এইটে। এর পরই দলের অধিনায়কত্ব হারান মোহাম্মদ আশরাফুল।

 ১০ মাস পর ২০১০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া দুই দলের বিপক্ষেই জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয় বাংলাদেশকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আশরাফুল ও সাকিবের ৯১ রানের জুটিতে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও ফিরতে হয়েছিল ২১ রানের পরাজয় নিয়ে। অজিদের বিপক্ষে আগে বোলিং করে ৫৭ রানেই তাদের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাইক হাসির ২৯ বলে ৪৭ রানে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪১ রানে। যেই রান তাড়া করতে নেমে হতশ্রী ব্যাটিংয়ে ২৭ রানের হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়ে দেশে ফিরে আসে সাকিবের বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে পরের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নামে দুই বছর আগে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে তাদের ৪-০ ব্যবধানে ‘বাংলাওয়াশ’ করার সুখস্মৃতি নিয়ে। সেই সুখস্মৃতি মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ৫৮ বলে তার ১২৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ১৯১ রানের বড় লক্ষ্যে খেলতে নামা বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। পরাজিত হয় ৫৯ রানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের ৫৪ বলে ৮৪ রানে ভর করে ১৭৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করালেও বোলিং ব্যর্থতায় সেই ম্যাচও হারে ৮ উইকেটে।
পরের বছর ঘরের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে আটে না থাকায় খেলতে হয়েছিল বাছাইপর্ব। আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে ৯ ও ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে জেতা দলকেই হংকংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ২ উইকেটে। ১১.৫ ওভারের ভেতর হংকংকে জিততে না দেওয়ায় মূলপর্বে পা রাখে বাংলাদেশ। যদিও মূলপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৩, ভারতের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হারতে হয়েছিল ৫০ রানে। কোয়ালিফায়ারে দুই ম্যাচ জেতার পর মূলপর্বের তিন ম্যাচসহ হারতে হয় টানা ৪ ম্যাচ। ফলে টানা চার আসর মূলপর্বে জয়হীন থাকেন মুশফিকরা। ঘরের মাঠে হতাশ করেন তারা সমর্থকদের।

ভারতের মাটিতে পরের আসরে বাংলাদেশ যায় আত্মবিশ্বাসের ভাণ্ডার সঙ্গে নিয়ে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হারলেও ভালো পারফরম্যান্সের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভারত গিয়েও পূর্বের ন্যায় হতাশ করেন মাশরাফিরা। সেই বিশ্বকাপের হতাশা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সমর্থকরা। বাছাইপর্বে নেদারল্যান্ডস ও ওমানের বিপক্ষে জয় এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগিতে মূলপর্বে জায়গা নিশ্চিত করলেও ভারতের বিপক্ষে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে ৩ বলে ২ রান নিতে না পেরে ম্যাচ বিলিয়ে দিয়ে আসেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১ রানের পরাজয়ের সেই হতাশা এখনো কুরেকুরে খায় সমর্থকদের। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজয় তো আছেই।

দিন বদলের বার্তা নিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে ২০২১ বিশ্বকাপে যায় বাংলাদেশ। সঙ্গে ছিল ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারানোর আত্মবিশ্বাস। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর মূলপর্বে আর কখনোই ম্যাচ জিততে না পারা বাংলাদেশ এবার মুছে দেবে সেই ব্যর্থতা, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সমর্থকদের। আশার বাণী ছিল অধিনায়কের মুখেও। কিন্তু বাছাইপর্বে প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানে হেরে সেখান থেকেই তৈরি হয় বিদায়ঘণ্টা বেজে যাওয়ার শঙ্কা। বাকি দুই ম্যাচে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে মূলপর্বে জায়গা করে নিলেও দেখা মেলে এক নির্বিষ দলনেতার অধীনে থাকা অদক্ষ সৈন্যদের বেহাল রূপ। সংবাদ সম্মেলনে চলতে থাকে কথার লড়াই। দলের খেলোয়াড় থেকে বোর্ডের কর্মকর্তা আর সবশেষ খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যরাও তাতে যোগ দেন। মাঠের পারফরম্যান্সে আসেনি কোনো পরিবর্তন। সেবারও হারতে হয়েছিল মূল পর্বের সব ম্যাচ। টাইগারখ্যাত বাংলাদেশ দলকে মনে হয়েছে যেন নখদন্তহীন এক বাঘ। হুঙ্কার দেয় কিন্তু জয় হাতছাড়া হয়ে যায়।

দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সেই আসরে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া দুটি জয়ই ২০০৭ আসরের পর মূলপর্বে পাওয়া বাংলাদেশের জয়ের সম্বল। ভারতের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে লিটনের ঝোড়ো সূচনার পরও খেই হারানো বাংলাদেশ ডিএল পদ্ধতিতে হারের স্বাদ পায় ৫ রানে। তা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রুশোর ঝোড়ো শতকে পাত্তা না পাওয়া সাকিবরা হারেন ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। নেদারল্যান্ডসের কাছে প্রোটিয়ারা ১৩ রানে হারলে বাংলাদেশের সামনে পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনালে পা রাখার সুযোগ চলে আসে। এমন ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিং ও ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৫ উইকেটে হেরে শেষ হয় বাংলাদেশের সেমিফাইনালের স্বপ্ন।

এবারের আসরেও বাংলাদেশের প্রস্তুতি মানসম্মত নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১ এ সিরিজ জয়ের পর বিশ্বকাপের স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নাকানিচুবানি খেয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর সমর্থকরা পাচ্ছেন না বেশি কিছু আশা করার সাহস। ঘুণে ধরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভাগ্যটাকে রঙিন করা আদৌ সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না অনেকের কাছেই। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জয় দিয়ে যেভাবে শুরু করেছিল বিশ্বকাপে কখনোই ছিল না তার ছিঁটেফোঁটা। দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও বলে গেছেন, ‘প্রত্যাশা খুব একটা করার দরকার নেই।’

সেই ক্যারিবীয় দ্বীপেই পরিপূর্ণ দ্রাবিড়

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
সেই ক্যারিবীয় দ্বীপেই পরিপূর্ণ দ্রাবিড়
ছবি : সংগৃহীত

রাহুল দ্রাবিড়, দ্য ওয়াল। ভারতীয় ক্রিকেটে পরিপূর্ণ এক অধ্যায়ের নাম!

ক্রিকেটার দ্রাবিড় তো বটেই, একজন মানুষ দ্রাবিড়ও যে কারও জন্য আদর্শিক ও অনুকরণীয় চরিত্র। আপনি সফল হতে চান? এজন দ্রাবিড়কে দেখুন, তার জীবন দর্শন মেনে চলুন। আর আপনি যদি ব্যর্থ হন, তাহলেও দ্রাবিড়কে দেখুন। খেলোয়াড় ও কোচিং ক্যারিয়ারে জীবনের জয়গানই রচনা করে গেছেন দ্রাবিড়। ক্রিকেট তাকে বঞ্চিত করেনি, জীবনও না।

হ্যাঁ, ক্রিকেট কিংবা জীবন, দুই জায়গাতেই উত্থান-পতন আছে। সাফল্য ব্যর্থতা আছে। কথায় বলে মানুষ শুধু সফলদেরই মনে রাখে। ভুলে যায় ব্যর্থদের। রাহুল দ্রাবিড় জীবনে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু নিজেকে ভুলতে দেননি কাউকে।

১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দ্রাবিড় যে সেবা দিয়ে গেছেন, ভারতীয় ক্রিকেট তা মনে রাখতে বাধ্য। আগ্রাসী কোনো পেসারের ১৫০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা বলও অবলীলায় ডিফেন্স করে দিতেন দ্রাবিড়। শান্ত-সৌম্য ভঙ্গিতেই প্রতিপক্ষকে ভেঙে চুরমার করতেন। দ্রাবিড়ের ডিফেন্স ভেদ করা ছিল যেকোনো বোলারের জন্য কঠিন। তাই তো তার আদুরে নাম হয়ে যায় ‘দ্য ওয়াল’। ওয়ানডে ও টেস্ট- দুই ফরম্যাটেই ১০ হাজারের বেশি রান করেছেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল এই ব্যাটারের একটা বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি।

খুঁজলে এমন অনেককে পাওয়া যাবে, যারা খেলোয়াড় হিসেবে খুব সফল, কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। দ্রাবিড়কে তাদের থেকে একটু আলাদাই বলতে হবে। কারণ বিশ্বকাপের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম রূপটা বোধহয় তিনিই দেখেছেন। ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ট্রফি জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে সোনালি ট্রফিতে হাতের পরশ বোলাতে পারেননি। ২০০৭ সালে পরের বিশ্বকাপ আসতে আসতে ভারতীয় দলের নেতৃত্বভার তুলে দেওয়া হয়েছিল দ্রাবিড়ের কাঁধে। ফেভারিট হিসেবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিল তার দল। কিন্তু প্রথমে বাংলাদেশ, পরে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গ্রুপ পর্বেই স্বপ্নের সলিলসমাধি ঘটেছিল দ্রাবিড়ের ভারতের। দেশটির খেলোয়াড়দের সেবার ফিরতে হয়েছিল রাতের অন্ধকারে পুলিশি প্রহরায়। পোর্ট অব স্পেনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর ভারতীয় ড্রেসিংরুমের বেশ কয়েকটি ছবি এখনো ব্যর্থতার মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে। যেগুলোতে দ্রাবিড়ের থমথমে মুখ আর তার শূন্যে চাহনিটাই বলে দেয়, কতটা নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

১৭ বছর পর সেই ক্যারিবীয় সাগরপাড়েই এবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেলেন দ্রাবিড়। খেলোয়াড় নয়, কোচের ভূমিকায়। কিন্তু বিশ্বকাপ তো। যা দ্রাবিড়ের জন্য মরীচিকা হয়েই দাঁড়িয়েছিল! খেলোয়াড় হিসেবে যেমন, কোচ হিসেবেও। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় একজন দ্রাবিড়ের যেন বৃত্ত পূরণ। যে বৃত্ত সাফল্য-ব্যর্থতার গল্পে ভরা। পরশু বার্বাডোসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারত পায় রুদ্ধশ্বাস এক জয়। প্রোটিয়াদের দিকেই ঝুঁকে যাওয়া ম্যাচটা দারুণ নৈপুণ্যে নিজেদের দিকে টানেন হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহরা। ভারত যখন ফের ম্যাচটা নিজেদের মুঠোতে টানে, তখন রাহুল দ্রাবিড়ের উচ্ছ্বাসটা ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৭ বছরের ব্যবধানে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ড্রেসিংরুমের ধরা পড়া রাহুল দ্রাবিড়কে পাশাপাশি বাঁধিয়ে রাখা যেতেই পারে। জীবনের কোনো এক জায়গায় যিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি। নিজের মেধাকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর সততার মধ্যে এগিয়ে চলেছেন। একদিন সবকিছু হারালেও ১৭ বছর পর ঠিক একই জায়গায় পরিপূর্ণ হলেন।

কোচ হিসেবে এই বিশ্বকাপ ট্রফির ছোঁয়াও কি আর খুব সহজে পেলেন দ্রাবিড়? ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার পর দীর্ঘ সময় ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৮ সালে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় করে দ্রাবিড়ের কোচিংয়েই। কিন্তু ২০২১ সালে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে দু-দুবার বিশ্বকাপ জয়ের কাছে গিয়েও ব্যর্থ হন দ্রাবিড়। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারে তার দল। গত বছর ঘরের মাঠে হারে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই কোচ দ্রাবিড় বিদায়ের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ এবার না হলে হয়তো কখনোই হতো না। খেলোয়াড় ও কোচিং মিলিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছরের ক্যারিয়ারে একটা বিশ্বকাপ দীর্ঘশ্বাস হয়ে থাকতো দ্রাবিড়ের। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাই ট্রফি জয়ের পর বললেন, ‘আমাদের যে কারও চেয়ে ট্রফিটি তারই (দ্রাবিড়ের) বেশি প্রাপ্য ছিল বলে আমি মনে করি। গত ২০-২৫ বছর ধরে ভারতের ক্রিকেটের জন্য তিনি যা করেছেন, আমার মতে, তার অর্জনের ঝুলিতে এটিই শুধু বাকি ছিল।’ 

সত্যিই তাই। অর্জন আর প্রাপ্তিতে একজন দ্রাবিড় এখন পরিপূর্ণ।

ঘূর্ণিঝড়ে বার্বাডোসে আটকা ভারত দল

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:৩০ এএম
ঘূর্ণিঝড়ে বার্বাডোসে আটকা ভারত দল
ছবি : সংগৃহীত

প্রায় দুই দিন হতে চললো ভারত ক্রিকেট দল শিরোপা খরা ঘুচিয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে। আসর শেষ হয়ে গেলেও দেশা ফেরা হয়নি রোহিত-কোহলিদের। যার মূল কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে এখনও বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে আটকা দলটি।

তাদের দেশে ফেরাতে এখন বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। তবে সেটি কতটুকু কার্যকর হবে, নিশ্চিত নয় সেটিও।  

বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী, ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক ক্যাটাগরি ফোর বা চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ‘বেরিল’ নামক ঘূর্ণিঝড়টিকে। গতকাল যার সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩০ মাইল। আটলান্টিকে চতুর্থ শ্রেণির ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটিই বছরে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে এল। এর আগে জুন মাসে কখনোই এমন ঘূর্ণিঝড় হয়নি বলেও জানিয়েছে।’

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত দলের ব্রিজটাউন ত্যাগ করার কথা ছিল সোমবার। সেখান থেকে প্রথমে নিউইয়র্ক। এরপর বাণিজ্যিক বিমানে মুম্বাই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না ঘূর্ণিঝড়ের কারণে।

ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ ভারতের দেশে ফেরা নিয়ে জানিয়েছে, বার্বাডোসের বিমানবন্দর খোলা থাকবে কি না, প্রাথমিকভাবে সেদিকে তাকিয়ে ছিল বিসিসিআই। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সে বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের বদলে দিল্লি পর্যন্ত সরাসরি চার্টার্ড ফ্লাইটের কথা ভাবছে বিসিসিআই। যদিও ভারতের স্কোয়াডের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও পরিবারের সদস্যদের মিলিয়ে ভারত দলের বহর ৭০ জনের। এতবড় বিমান বার্বাডোসে না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমান আনার কথা ভারতের। তবে এর জন্য আগে সচল থাকতে হবে বার্বাডোসের বিমানবন্দর।

অভিষেক ও বিদায়ে বিশ্বজয়

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৯ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৯ এএম
অভিষেক ও বিদায়ে বিশ্বজয়
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বকাপের মঞ্চে শুরু। শেষটাও বিশ্বকাপে। ক্যারিয়ারের শুরুর সঙ্গে শেষের কী চমৎকার মিল! ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু ভারতের হিটম্যানখ্যাত ড্যাশিং ব্যাটার রোহিত শর্মার। পরশু সেই বিশ্বকাপের মঞ্চেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন। অনেক রেকর্ড আর সাফল্যের পঙক্তিমালা রচনা করে বিদায়ের জন্য বড় মঞ্চকেই বেছে নিয়েছেন রোহিত। চার-ছক্কার ধুন্ধুমার ক্রিকেটে ভারতের জার্সি গায়ে আর দেখা যাবে না তাকে। পরশু ব্রিজটাউনের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতকে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ ট্রফি জিতিয়ে রণে ভঙ্গ দেন তিনি।

২০০৭ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে আবারও শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ল ভারত। এই ট্রফি জয়ের সঙ্গেও রয়েছে রোহিতের যোগসূত্র। ২০০৭ সালে ভারত যখন প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়, ওই দলের কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন রোহিত। ১৭ বছর পর ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফিজয়ী দলেও আছেন। তবে এবার আর কনিষ্ঠ হিসেবে নয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ জ্যেষ্ঠ সদস্য, অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ট্রফি উপহার দিলেন হিটম্যান। বলতে গেলে, বিশ্বকাপ জিতে শুরু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার, থামলেনও বিশ্বকাপ জিতে।

এমন একজন ক্রিকেটারের বিদায়ে ব্যথিত তার ভক্তরা। ট্রফি জয়ের আনন্দের পাশাপাশি রোহিতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার কষ্টে কাতর দলীয় সমর্থকরা। বিদায়বেলায় কষ্ট ছুঁয়েছে রোহিতকেও। তবে আবেগকে সংবরণ করে ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষে রোহিত বলেছেন, ‘এটি আমার শেষ ম্যাচ। এই ফরম্যাটকে বিদায় বলার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। আমি প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি। এই ফরম্যাটেই আমার ভারতীয় দলে ক্যারিয়ার শুরু। ভারত বিশ্বকাপে ট্রফি জিতুক, এটি আমি খুব করে চাইছিলাম। বলতে গেলে ভীষণভাবে। আমার জন্য ট্রফি জয়ের মুহূর্তটি খুবই আবেগী এক মুহূর্ত। জীবনে এই শিরোপাটি যেভাবেই হোক পেতে চেয়েছিলাম। আমরা সেটি পেরেছি। খুব খুশি লাগছে।’

ভারতীয় কিংবদন্তি কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের পাশে নিজের নাম যোগ করলেন রোহিত শর্মা। ১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়ে ভারত। ওই বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেন কপিল দেব। এরপর ২০০৭ টি-টোয়েন্টি এবং ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভারত জেতে ধোনির নেতৃত্বে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ট্রফি জয়ে আবারও নাম লেখাল ভারত। এবার রোহিতের নেতৃত্বে এবং তার অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মাঝে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেশ কয়েকবার ফাইনালে উঠেও ট্রফি জিততে পারেনি ভারত। এমনকি গত বছর ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি থেকে বঞ্চিত হয়। ওই আসরেও ভারতের নেতৃত্বভার ছিল এই রোহিত শর্মারই কাঁধে।

একজন সফল অধিনায়ক হিসেবে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে আমৃত্যু নাম লেখা থাকবে রোহিত শর্মার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেও সফল ব্যাটার হিসেবে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে তার নাম। ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে অনেক রেকর্ডের মালিক তিনি। ভারতের জার্সিতে ১৫৯ ম্যাচে ১৫১ ইনিংসে ৩২.০৫ গড়ে মোট ৪ হাজার ২৩১ রান সংগ্রহ করেছেন। যাতে সেঞ্চুরি ছিল ৫টি, হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩৭। স্ট্রাইক রেট ১৪০.৮৯। ঝলমলে এক ক্যারিয়ার। টি-টোয়েন্টিতে রোহিত শুধু ভারতের পক্ষেই সর্বোচ্চ রান কিংবা সর্বাধিক ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়েননি; বিশ্ব ক্রিকেটে এই দুটি রেকর্ড কিন্তু তারই দখলে। এ ছাড়া রোহিত শর্মা এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক (৫টি)। ৩৭টি হাফ সেঞ্চুরি নামের পাশে যোগ করেছেন; যা বিশ্বে ক্রিকেটে চার মারের দিক থেকে তাকে তিনে বসিয়েছে। হিটম্যান রোহিত ছক্কা হাঁকাতে দারুণ পটু। ক্যারিয়ারে মোট ২০৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। বিশ্বে আর কোনো ক্রিকেটার এত ছক্কা হাঁকাতে পারেননি।

রেকর্ডের বরপুত্র রোহিত শর্মার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার নামটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে। প্রোটিয়াদের মাটিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে ডারবানে। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দ্র শেহবাগ, যুবরাজ সিং, রবীন উথাপ্পা, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো হার্ডহিটার ব্যাটারদের কারণে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ব্যাট করা হয়নি। তবে পরদিনই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপ্ক্ষে সুযোগ পেয়ে যান। আর প্রথম সুযোগেই অপরাজিত ৫০ রান করে বিশ্ববাসীকে নিজের আগমনী বার্তাটা দিয়ে রাখেন। এরপর গত ১৭ বছরে রোহিত ভারতের জার্সিতে কী করেছেন ব্যাট হাতে, সেটা তো সবারই জানা।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ক্যারিয়ার শুরু রোহিতের। কাকতালীয়ভাবে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও প্রতিপক্ষ ছিল ওই আফ্রিকাই। এবারও জয় রোহিতদের। ফাইনাল ম্যাচে। বিশ্বকাপ মঞ্চে। কিংবদন্তিরা বোঝেন কোথায় কী করতে হয়? কোথায় ইতি টানতে হয়! বড় মঞ্চে বড় সাফল্যে দলকে রাঙিয়ে কিংবদন্তি রোহিতও বলে দিলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি আর নয়।

রোহিত-কোহলির পর থামলেন জাদেজাও

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম
রোহিত-কোহলির পর থামলেন জাদেজাও
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বকাপ জেতার পর ম্যান অব দ্যা ফাইনালের পুরস্কার গ্রহণ করতে এসে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বিরাট কোহলি। শিরোপা উদযাপন শেষে সংবাদ সম্মেলনে রোহিত শর্মাও জানান অবসরের সিদ্ধান্তের কথা। পুরোপুরি একদিন না পেরোতেই এবার অবসরের ঘোষণা দিলেন ভারতের আরেক ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা।

রবিবার (৩০ জুন) ইনস্টাগ্রামে অবসরের ঘোষণা দেন জাদেজা। ভারতের হয়ে ৩৫ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার খেলেছেন ৭৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

অবসর বার্তায় জাদেজা লিখেছেন, ‘কৃতজ্ঞ হৃদয়ে আমি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানাচ্ছি। গৌরবের সঙ্গে দ্রুতবেগে ছুটে চলা ঘোড়ার মতো আমি সব সময়ই দেশের জন্য সেরাটা দিয়েছি এবং অন্যান্য সংস্করণে সেটা করে যাব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ অর্জন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, যেটা জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সব স্মৃতি, উল্লাস আর বিরামহীন সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’

নিজের শেষ বিশ্বকাপটায় খুব একটা ভালো করতে পারেননি জাদেজা। সবমিলিয়ে ৫ ইনিংসে ব্যাট হাতে করেন ৩৫ রান। বল হাতেও ছিলেন সাদামাটা। শিকার করেছেন মাত্র ১টি উইকেট।

ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ৪১ ইনিংসে ব্যাট করে ১২৭.১৬ স্ট্রাইক রেটে ৫১৫ রান করেছেন জাদেজা। আর ৭১ ইনিংসে বল হাতে নিয়ে ৭.১৩ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৫৪ উইকেট।

উইকেটের বালু খেয়ে রোহিতের অন্যরকম উদযাপন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
উইকেটের বালু খেয়ে রোহিতের অন্যরকম উদযাপন
ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ ১১ বছর পর আইসিসি শিরোপার খরা কাটানো এবং ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর বাঁধাভাঙা আবেগের জোয়ার দেখা গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের উল্লাসে। আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন দলের ক্রিকেটাররা। এসবের মাঝে ভিন্ন এক উদযাপন করতে দেখা গেছে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। পিচের মাটি আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে পুরে নিয়েছিলেন মুখে।

এখন পর্যন্ত সবগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা রোহিত শর্মা ২০০৭ সালের আসরের পর জিতলেন ২০২৪ আসরও। এর আগেরবার ছিলেন দলের সাধারণ সদস্য আর এবার জিতলেন অধিনায়ক হিসেবে। জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে দিলেন এই ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণাও।

পিচের ওপর বসে বালু মুখে নিয়ে রোহিতের এমন উদযাপন সম্ভবত এটাই প্রমাণ করে যে এই শিরোপা ঠিক কতটা আরাধ্য ছিল ভারতের অধিনায়কের কাছে। যেই উইকেটে খেলে শিরোপা ধরা দিয়েছে সেই উইকেটকে যেন পরম মমতায় নিজের ভেতর পুষে রাখলেন তিনি।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে রোহিতকে কেউ এমন উদযাপন নিয়ে প্রশ্ন না করলেও আইসিসির প্রকাশিত ভিডিও নজর করেছে ভারত তথা সকল ক্রিকেট সমর্থকদের। 

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া রোহিত শিরোপা জয় নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এটা খুব করে চেয়েছি। ওই মুহূর্তটার কথা ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন। আমি তখন কী ভাবছিলাম, সেটা বলতে চাই না। আমি বলতে চাই না, তখন আমার মনের মধ্যে কী চলছিল। কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এটা খুব আবেগের মুহূর্ত ছিল।’