ঢাকা ২২ আষাঢ় ১৪৩১, শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

দুর্লভ বইয়ের পাঠাগার গড়লেন মাওলানা ডা. অছিউদ্দীন

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৪ এএম
দুর্লভ বইয়ের পাঠাগার গড়লেন মাওলানা ডা. অছিউদ্দীন
ডা. অছিউদ্দীন ও তার পাঠাগারের ছবি। সংগৃহীত

বইপ্রেমী বাবাকে দেখে ‘বইপাগল’ হয়ে ওঠেন নরসিংদীর মাওলানা ডা. অছিউদ্দীন। গড়ে তোলেন জাগরণী পাঠাগার। এবার ৫৬ বছরে পড়ল পাঠাগারটি। পাঠাগারে বই আছে ২০ হাজার। আছে ৫০ বছরের পত্রিকার কাটিং ও দুর্লভ সংগ্রহ। 

টিফিনের টাকায় পাঠাগার 
অছিউদ্দীনের বাবা হাজি ইলিয়াস মাস্টার ছিলেন শিক্ষক। অবসর পেলেই বই পড়তেন। ছেলেবেলায় বাবার বই পড়া দেখে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় অছিউদ্দীনের। বই পড়া শুরু করেন। পছন্দের বই জমাতে থাকেন টিনের বাক্সে। টিফিনের এক-দুই পয়সা বাঁচিয়ে কেনেন বই। একদিন সহপাঠীরা বাড়ি এলে উঠোনে মেলে ধরেন সেই বাক্স। বন্ধুরা রীতিমতো অবাক! বন্ধুদের নিয়ে পাঠাগার করলেন। নাম দিলেন ‘কিশোর সমিতি’। এ নামে চার বছর চলে। ১৯৬৮ সালে নাম রাখেন জাগরণী সমিতি। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট পাঠাগারটি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে রেজিস্ট্রেশন পায়। পরে ২০১১ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর থেকে নরসিংদী জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের মাধ্যমে ‘জাগরণী পাঠাগার’ নামে পরিচিতি ও সনদ লাভ করে। ডা. অছিউদ্দীন বললেন, ‘তখন ১৯৬৮ সাল, আমি পুরান ঢাকায় থাকি। ফুটপাতে দোকানিরা বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসত। হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা কিংবা এক টাকায় বই কিনতাম। বইয়ের পাহাড়ই গড়েছি আমি।’

২০ হাজার বইয়ের ভাণ্ডার
প্রায় ২০ হাজার বই আছে জাগরণী পাঠাগারে। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও ইসলামবিষয়ক নানাধর্মী বই রয়েছে। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, কায়কোবাদসহ অনেকের রচনাসমগ্র আছে। ‘তত্ত্ববোধিনী’,  ‘প্রবাসী’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘ছোলতান’, ‘মোহাম্মদী’, ‘সওগাত’ ইত্যাদি পত্রিকার কপি ছাড়াও দৈনিক পত্রিকার ফিচার কাটিং আছে প্রায় ৫০ বছরের। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় খোলা থাকে পাঠাগার। পাঠক এলে মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। রায়পুরার আদিয়াবাদ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, ‘আমার বাড়ি স্যারের বাড়ির পাশেই। একটা মানুষ বইয়ের জন্য এত পাগল হতে পারে, স্যারকে না দেখলে বুঝতাম না। আমি সময় পেলে পাঠাগারে পড়তে যাই।’ নরসিংদী মাধবদীর জালপট্টি মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ রাকিব বলেন, ‘তিনি আমার চাচা। তাকে দেখেই বই পড়ার আগ্রহ জন্মেছে আমার।’

যেমন আছে পাঠাগারটি
পাঠাগারটি শুরু করেছিলেন মাতৃভিটায়। সেখানে প্রায় পঞ্চাশ বছর ছিল। বর্তমানে ডা. অছিউদ্দীনের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান উম্মুল কুরা মাদরাসার এক কক্ষে পাঠাগার নিয়ে এসেছেন। ডা. অছিউদ্দীন বললেন, ‘তিল তিল করে গড়া পাঠাগারের স্থায়ী কোনো স্থাপনা নেই। টাকার অভাবে বইয়ের যত্ন নিতে পারছি না। সরকার এগিয়ে এলে বড় উপকার হতো। আমার ছেলে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহকে অসিয়ত করেছি, সে এ পাঠাগারের দেখাশোনা করবে।’

যারা এসেছেন
লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও জীবনানন্দ গবেষক উইলিয়াম রাদিচে জাগরণী পাঠাগারে আসেন ১৯৯০ সালে। ২০০৮ সালে এসেছিলেন তৎকালীন নরসিংদী জেলার অ্যাডিশনাল ডিসি বিজয় কান্তি। এ ছাড়াও বহু গুণীজন পাঠাগার পরিদর্শনে এসেছেন। সবই যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছেন। 

বইও লিখেছেন
শিক্ষকতা, ডাক্তারি, পাঠাগার পরিচালনার পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়ে গেছেন অছিউদ্দীন। সম্পদনা করেছেন মাসিক পত্রিকা ও সাময়িকী। তার সম্পাদিত বই জাগরণ, অগ্রদূত, লাব্বাইক, নাজাত, নওরোজ—বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে ‘মরমি কবি সাবির জীবনদর্শন’, ‘কোরআন মাজিদের বিষয়ভিত্তিক আয়াত’, ‘আল কোরআনের ভাষায় ইতিহাসের শিক্ষা’, ‘মক্কা-মদিনা ও হজের বিধি-বিধান’, ‘পয়গামে রাসুল’ উল্লেখযোগ্য। 

কেমন আছেন ডা. অছিউদ্দীন 
নরসিংদীর রায়পুরার আদিবাদ ইউনিয়নের সেরাজনগর (নয়াচর) ডা. অছিউদ্দীনের বাড়ি, জন্ম ১৯৪৬ সালে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পড়েছেন কওমি মাদরাসা থেকে। ১৯৭৩-৭৪ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে বিএ পাস করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোয় দেশরক্ষায় কাজ করেছেন। ৬ সন্তানের জনক তিনি। সবাই ইসলাম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। বার্ধক্যজনিত রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। তবুও প্রতিনিয়ত ভাবেন পাঠাগার নিয়ে—কীভাবে এটিকে টিকিয়ে রাখা যায়।

 

লেখক : নরসিংদী প্রতিনিধি, দৈনিক খবরের কাগজ

ভ্রমণের সুন্নত ও আদব

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
ভ্রমণের সুন্নত ও আদব
পাসপোর্ট, টিকিট, ট্রাভেল ব্যাগ ও চেকলিস্টের ছবি

ভ্রমণ শুরু করার আগে যেসব সুন্নত ও আদব জেনে রাখা উচিত, সেগুলো হলো

হালাল পাথেয়র ব্যবস্থা করা: সফরে যাওয়ার আগে পরিবারের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সফরের জন্য হালাল পাথেয়র ব্যবস্থা করা। কারণ হালাল রুজি ছাড়া কোনো ভালো কাজই আল্লাহতায়ালা কবুল করেন না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কবুল করেন না।’ আল্লাহতায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করো এবং নেক আমল করো।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৫১)

দেনা-পাওনা ও অসিয়ত লিখে রাখা: সফরে বের হওয়ার আগে দেনা-পাওনার হিসাব এবং অসিয়ত থাকলে লিখে রাখা উচিত। কারণ কোনো মানুষই জানে না, সে কোথায়, কখন মারা যাবে। (সুরা লোকমান, আয়াত: ৩৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার কাছে অসিয়তযোগ্য কিছু (সম্পদ) থাকাবস্থায় সে দুই রাত কাটাবে অথচ তার কাছে অসিয়ত লিখিত থাকবে না।’ (বুখারি, ২৭৩৮)

সম্ভব হলে স্ত্রী সঙ্গে নেওয়া: দীর্ঘদিনের উদ্দেশ্যে সফরকালে সম্ভব হলে ও ব্যবস্থা থাকলে স্ত্রীকে সঙ্গে নেওয়া উচিত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে যাওয়ার মনস্থ করলে স্ত্রীদের মধ্যে লটারি করতেন। যার নাম আসত তিনি তাঁকে নিয়েই সফরে যেতেন। (বুখারি, ২৫৯৩) তবে হজের সফরে তিনি সব স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। (জাদুল মাআদ, ১/৪৪৫)

উপদেশ গ্রহণ করা: সফরে বের হওয়ার আগে সফরের স্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞ অথবা সৎ ও পুণ্যবান ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি, অতএব আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন, অবশ্যই তুমি আল্লাহভীতি (তাকওয়া) অবলম্বন করবে এবং প্রতিটি উঁচু স্থানে ওঠার সময় তাকবির (আল্লাহ আকবার) ধ্বনি দেবে। লোকটি যখন চলে যাচ্ছিল, এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আল্লাহ, তার পথের ব্যবধান কমিয়ে দাও এবং তার জন্য সফর সহজতর করে দাও।’ (তিরমিজি, ৩৪৪৫)

সম্ভব হলে বৃহস্পতিবার সফর শুরু করা: সম্ভব হলে বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া বা সফর শুরু করা উত্তম। কাব বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাবুক অভিযানে বৃহস্পতিবারে বের হলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বের হওয়া পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ২৯৪৯)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্য দিনে কমই সফরে বের হতেন।’ (বুখারি, ২৯৪৯)

দিনের প্রথম অংশে বা রাতে সফর শুরু করা: অন্যান্য কাজের মতো সকাল সকাল সফরে বের হওয়াও সফরের অন্যতম আদব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার উম্মতের জন্য তাদের সকালে বরকত দাও। আর তিনি যখন ছোট-বড় কোনো অভিযানে সেনাবাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদের সকালে পাঠাতেন। (আবু দাউদ, ২৬০৬)। সম্ভব হলে রাতের বেলায় সফর করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের ফজরের আগে অন্ধকার অবস্থায় সফর করা উচিত। কারণ রাতের বেলা জমিন সংকুচিত হয়।’ (আবু দাউদ, ২৫৭১)

ভ্রমণকালে পালনীয় কিছু সুন্নত ও আদব রয়েছে, সেগুলো হলো

ভ্রমণের শুরুতে দোয়া পাঠ করা: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে বের হওয়ার সময় উটের ওপর ধীরস্থিরতার সঙ্গে বসার পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এই দোয়াটি পাঠ করতেন, বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখখার লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিনা ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লা মুনকালিবুন। বাংলা অর্থ: ‘মহা পবিত্র সেই সত্তা, যিনি একে আমাদের জন্য (বাহনকে) অনুগত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।’ (মুসলিম, ১৩৪২)

সৎ বা ভালো লোকের সঙ্গী হয়ে সফর করা: সফরে ভালো সঙ্গী থাকা জরুরি। কারণ সঙ্গী-সাথির প্রভাবে মানুষ ভালো-মন্দের দিকে ধাবিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সৎ সঙ্গীকে সুগন্ধির সঙ্গে তুলনা করেছেন। যার সঙ্গে থাকলে সুগন্ধি পাওয়া যায়। আর অসৎ সঙ্গীকে কামারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যার সঙ্গে থাকলে কাপড় জ্বালিয়ে দেবে অথবা দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে। (বুখারি, ৫৫৩৪)

একাকী সফর না করা: সফরকালে একাকী না গিয়ে তিনজন বা তার বেশি লোকের সঙ্গে সফর করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একাকী সফরকারী হচ্ছে একটি শয়তান, আর একত্রে দুজন সফরকারী দুটি শয়তান। তবে একত্রে তিনজন সফরকারীই হচ্ছে প্রকৃত কাফেলা।’ (আবু দাউদ, ২৬০৭)

আমির বানানো: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি একত্রে সফর করলে তারা যেন নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে আমির বানায়।’ (আবু দাউদ, ২৬০৮)

একত্রিত থাকা: আবু সালাবা আল-খুশানি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লোকজন যখন কোনো স্থানে (বিশ্রামের জন্য) নামতেন, তখন তারা বিভিন্ন গিরিপথে ও উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়তেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের বলতেন, ‘এসব গিরিপথে ও পাহাড়ি উপত্যকায় তোমাদের বিভক্ত হয়ে পড়াটা শয়তানের ষড়যন্ত্র।’ (আবু দাউদ, ২৬২৮)

তাসবিহ পাঠ করা: সফরে বা অন্য যেকোনো সময় উঁচু স্থানে উঠতে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। (বুখারি, ২৯৯৩)

বেশি বেশি দোয়া করা: সফর অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। তাই সফর অবস্থায় বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। ১. পিতা-মাতার দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া।’ (আবু দাউদ, ১৫৩৬)

সফরে কুকুর বা ঘণ্টা না রাখা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ফেরেশতারা ওই সফরকারী দলের সঙ্গে অবস্থান করেন না, যাতে কোনো কুকুর বা ঘণ্টা থাকে।’ (মুসলিম, ৫৪৩৯)

সঙ্গী-সাথীদের সাহায্য করা: আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘একবার আমরা কোনো সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি সওয়ারিতে আরোহণ করে আগমন করল। অতঃপর সে তার দৃষ্টি ডানে-বামে ফিরানো শুরু করল। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যার কাছে অতিরিক্ত সওয়ারি আছে; সে যেন তা তার জন্য নিয়ে আসে যার সাওয়ারি নেই। আর যার কাছে নিজের পাথেয়র অতিরিক্ত পাথেয় আছে; সে যেন তার জন্য তা নিয়ে আসে, যার পাথেয় নেই।’ (মুসলিম, ১৭২৮)

পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা: সফরে সব ধরনের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)

মাহরাম ছাড়া নারীদের একাকী সফর না করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নারীরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ছাড়া সফর করবে না। মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ কোনো নারীর কাছে গমন করতে পারবে না।’ (বুখারি, ১৮৬২)

অপচয় না করা: সফর অপচয় যেন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। (সুরা ইসর, আয়াত: ২৭)

আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানে সফর না করা: আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির এলাকায় যথাসম্ভব প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একান্ত প্রবেশ করতে হলে কান্নারত অবস্থায় প্রবেশ করবে। (বুখারি, ৪৩৩)

নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার পর দোয়া পড়া: খাওলাহ বিনতু হাকিম (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো স্থানে অবতরণ করে যে এই দোয়াটি পাঠ করবে; ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো জিনিস তার অনিষ্ট করতে পারবে না। দোয়াটি হলো, বাংলা উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তামমাতি মিন শাররি মা খালাক। বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি সকল কিছুর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম, ২৭০৮)

যানবাহনের ওপর নামাজ আদায় করা: সফর অবস্থায় যানবাহনে নামাজ আদায় করার সুযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ইশারায় রুকু ও সিজদা করতে হবে। রুকু থেকে সিজদায় মাথা তুলনামূলক একটু বেশি ঝুঁকাতে হবে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে ফরজ নামাজ ছাড়া তাঁর সওয়ারিতেই ইশারায় রাতের নামাজ আদায় করতেন; সওয়ারি যে দিকেই ফিরুক না কেন। এ ছাড়া তিনি বাহনের ওপরেই বিতর আদায় করতেন।’ (বুখারি, ১০০০)

ভ্রমণ থেকে ফেরার সময়ের সুন্নত ও আদবগুলো হলো

যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পরিবারের কাছে ফেরা: সফর হলো কষ্টের স্থান। তাই সফরের কাজ শেষ হলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পরিবারের কাছে ফিরে আসা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সফর আজাবের অংশবিশেষ। যথাসময়ে পানাহার ও নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই সে যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আপনজনের কাছে ফিরে যায়।’ (বুখারি, ১৮০৪)

হঠাৎ করে রাতে বাড়িতে প্রবেশ না করা: দীর্ঘ সফর থেকে ফিরে হঠাৎ করে বা কোনো প্রকার অবহিতকরণ ছাড়া রাতে বাড়িতে প্রবেশ করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে কখনো (সফর থেকে ফিরে) পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না। তিনি প্রভাতে কিংবা বিকাল ছাড়া পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না।’ (বুখারি, ১৮০০)

নামাজ আদায় করা: কাব বিন মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি, ৪৪৩)

অভ্যর্থনা জানাতে এলে তাকে সম্মান করা: সফরকারীকে কেউ অভ্যর্থনা জানাতে এলে আগত ব্যক্তিকে সম্মান করা উচিত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় এলে আব্দুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে স্বাগত জানায়। তিনি অভ্যর্থনাকারীদের একজনকে তাঁর সওয়ারির সামনে ও অন্যজনকে পিছনে তুলে নেন।’ (বুখারি, ৭৯৮)

পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য কিছু নিয়ে আসা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া দাও, তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ (বায়হাকি, ৬/১৬৯)

সফর থেকে ফিরে দোয়া পাঠ করা: আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন,  রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর থেকে ফিরে এসে এ দোয়াটি পড়তেন। দোয়াটি হলো, বাংলা উচ্চারণ: আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা লিরব্বিনা হামিদুন। বাংলা অর্থ: আমরা প্রত্যাবর্তন করলাম তওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের মহান রবের প্রশংসাকারী হিসেবে। (মুসলিম, ১৩৪২)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

ভ্রমণ পরিচিতি ও বিধান

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
ভ্রমণ পরিচিতি ও বিধান
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত বিমান থেকে তোলা ছবি

ইসলামে ভ্রমণ বা সফর একটি উৎসাহিত বিষয়। বরং আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য দেখে ঈমানের দৃঢ়তা সৃষ্টি করতে এবং  অবিশ্বাসীদের করুণ পরিণতি দেখে শিক্ষাগ্রহণের জন্য ভ্রমণ অন্যতম ইবাদতও বটে। এ ছাড়াও নানা প্রয়োজনে ভ্রমণ করতে হয়। মানবজীবনের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শব্দগতভাবে সব ধরনের ভ্রমণকে সফর বলা হলেও ইসলামি শরিয়তে নির্দিষ্ট দূরত্বের ও নির্ধারিত সময়ের সফরকারীকে মুসাফির বলা হয়। এমন মুসাফিরই শুধু সফরকালে ইসলামি বিধান পালনের ক্ষেত্রে ছাড় পেয়ে থাকে। যেমন—নামাজের ক্ষেত্রে কসর, রোজার ক্ষেত্রে কাজা আদায়ের সুযোগ। এ ছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ, যা সফরকে সহজ করে। 

সফর পরিচিতি

সফর আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভ্রমণ করা, যাত্রা বা প্রস্থান। যিনি সফর করেন তাকে বলা হয় মুসাফির। শরয়ি কসরের দূরত্ব পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি পথ অতিক্রম করার জন্য বের হওয়াকে ইসলামি পরিভাষায় সফর বলে। ইসলামের দৃষ্টিতে সফর মোট ৫ প্রকার। ১. হারাম বা নিষিদ্ধ সফর। ২. মাকরুহ বা অপছন্দনীয় সফর। ৩. মুবাহ বা জায়েজ সফর। ৪. মুস্তাহাব বা পছন্দনীয় সফর। এবং ৫. ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় সফর। (শারহুল মুমতে আলা জাদিল মুসতাকনি, ৪/৩৪৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) গোটা জীবদ্দশায় মোট পাঁচ ধরনের সফর করেছেন। সেগুলো হলো—১. বাণিজ্য সফর, ২. হিজরতের সফর, ৩. জিহাদের সফর, ৪. ওমরার সফর এবং ৫. হজের সফর। (জাদুল মাআদ, ১/৪৪৪)  

মুসাফির কে?

মুসাফির অর্থ সফরকারী বা ভ্রমণকারী। ইসলামি শরিয়তে মুসাফির এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ৪৮ মাইল (৭৮ কিলোমিটার প্রায়) বা তার বেশি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করে এবং গন্তব্যে পৌঁছে ১৫ দিনের কম অবস্থান করে। কাজেই যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে সে মুসাফির নয়; বরং সে মুকিম। আবার ৭৮ কিলোমিটার কিংবা তার চেয়ে বেশি দূরত্বে সফর করলে পথিমধ্যে মুসাফির হলেও কোনো এক গ্রাম বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে ওই স্থানে সে মুকিম।

নামাজের বিধান

মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত (কসর) পড়বেন। আর ফজর, মাগরিব ও বিতর নামাজ পুরো আদায় করবেন। সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজগুলো মুকিম অবস্থার মতো আবশ্যক থাকে না। তবে সময়-সুযোগ থাকলে পড়ে নেওয়া উত্তম। সুন্নত নামাজের কসর হয় না। তাই সুন্নত আদায় করলে পুরোই আদায় করতে হবে। 
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করাতে কোনো আপত্তি নেই।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১) 
হাদিসে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জবানিতে মুসাফিরের নামাজ দুই রাকাত, মুকিম বা বাড়িতে অবস্থানকারীর নামাজ চার রাকাত এবং ভীতিকর অবস্থায় নামাজ এক রাকাত ফরজ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)

কসর বাধ্যতামূলক

মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে আল্লাহর অনুগ্রহ উপেক্ষা করার কারণে গুনাহগার হবে। তবে মুকিম ইমামের পেছনে হলে জামাতের স্বার্থে চার রাকাত পুরো করবে। মুসা ইবনু সালামা আল হুজালি (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি মক্কায় অবস্থানকালে যদি ইমামের পেছনে নামাজ আদায় না করি, তা হলে কীভাবে নামাজ আদায় করব? তিনি বললেন, দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। এটি আবুল কাসিম (সা.)-এর সুন্নত।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৮)

রোজার বিধান

মুসাফিরের জন্য সফরকালীন রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে পরে কাজা আদায় করতে হবে। উত্তম হলো—যদি কষ্ট কম হয় তা হলে রোজা পালন করা। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর, তা চান না। এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

কোরবানির বিধান

মুসাফিরের জন্য কোরবানিও আবশ্যক নয়। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য মুকিম হওয়া শর্ত। কোরবানির (১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত) সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম তথা মুসাফির নয় এমন স্বাধীন মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। তবে মুসাফিরের জন্যও অবকাশ থাকলে কোরবানি করা উত্তম। সাওরি হাম্মাদ থেকে তিনি ইবরাহিম থেকে বর্ণনা করেন, ইবরাহিম (রহ.) বলেন, হাজি ও মুসাফিরের জন্য কোরবানির ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক, হাদিস: ৮১৪২)
পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম ধর্ম নানাবিধ বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। এসবের অন্যতম হলো সহজসাধ্যতা। সবার জন্য উপযোগী ও উপকারী করেই ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে। এ দ্বীন অনুশীলনের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

অজুর ফরজ কয়টি

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
অজুর ফরজ কয়টি
অজু করছেন এক মুসল্লি। ছবি : ইন্টারনেট

আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)

ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম অজু। নামাজের জন্য অজু করা আবশ্যক। অজু করা ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমাদের মুখ হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে ও তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর গিট পর্যন্ত ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। যদি তোমরা অসুস্থ থাকো বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসো কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গত হও, আর পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করবে। পরিষ্কার মাটি দিয়ে এবং তা মুখে ও হাতে বুলিয়ে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না এবং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান- যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬)

অজুর ফরজ
অজুতে চারটি ফরজ কাজ রয়েছে। কেউ যদি তা পরিপূর্ণভাবে পালন না করে, তা হলে তার অজু সঠিক হবে না। অজুর চার ফরজ হলো—

  • সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা।
  • দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
  • মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা।
  • দুই পা টাখনুসহ ধৌত করা।

অজুর ফজিলত
নুআইম মুজমির (রহ.) বলেন, ‘আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। অতঃপর তিনি অজু করে বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে, যে অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৬)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

‌আত্তাহিয়াতু কি, কখন পড়তে হয়?

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম
‌আত্তাহিয়াতু কি, কখন পড়তে হয়?
নামাজের বৈঠকে দোয়া পড়ছেন মুসল্লি। ছবি: ইন্টারনেট

তাশাহুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া, যা নামাজের প্রত্যেক বৈঠকে পড়তে হয়। তাশাহুদকে অনেকে আত্তাহিয়াতু বলেন। আত্তাহিয়াতু হচ্ছে আল্লাহতায়ালা এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর একটি কথোপকথন। নামাজের ভেতরে যেসব কাজ ফরজ তার একটি নামাজে বৈঠকে বসা। আর বৈঠকে আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব (আবশ্যক)।

তাশাহুদের আরবি

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণ: আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালা ওয়াতু, ওয়াত তাইয়িবাতু, আসসালামু আলাইকা আইয়ু হান নাবিইয়ু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

বাংলা অর্থ: সমস্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি, আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।

তিন বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ওয়াজিব। (বুখারি, ১/১১৪) এবং প্রথম ও শেষ উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া আবশ্যক। (বুখারি ১/১১৫: ৮৩০, ৮৩১)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

 

ঘুম থেকে ওঠার দোয়া

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১০ পিএম
ঘুম থেকে ওঠার দোয়া
শিল্পীর তুলিতে আঁকা ঘুমন্ত বালকের ছবি। ফ্রিপিক

ঘুম আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ। মানুষ চাইলেই ঘুমাতে পারে না। কেউ কেউ সামান্য একটু শান্তির ঘুমের জন্য হাজারো টাকার ওষুধ খায়। আবার কেউ কেউ ঘুম দূর করার জন্যও ওষুধ খায়। তবে পরিমিত ঘুম মানবদেহের জন্য উপকারী। মানুষের ক্লান্তি-অবসাদ দূর করতে ঘুমের অবদান অসামান্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুম বা নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাতকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১১) 

একজন মুসলমানের কোনো কাজ যখন আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হয়, তখন তা ইবাদতে পরিণত হয়। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ঘুম থেকে জেগে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত পূর্ণ সময়ই ইসলামি বিধিবিধান রয়েছে। এ বিধানগুলো পালনে আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে অগণিত সওয়াব।  

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার দোয়া
হুজাইফা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘুম থেকে উঠে বলতেন, 

الحمدُ لله الذي أحيَانَا بَعْدَ مَا أماتَنَا وإليه النُّشُوْر

বাংলা উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আহইয়া না বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। 

বাংলা অর্থ: প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদের জীবিত করলেন, আর তারই কাছেই সবার পুনরুত্থান। (মুসলিম, হাদিস: ২৭১১)

মানুষ যখন আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে, আল্লাহ নেয়ামতকে বৃদ্ধি করে দেন। তার থেকে দূর করবেন ক্লান্তিভাব। সে শরীরে ফিরে পাবে এক নতুন উদ্যমতা।

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক