![গরমে বাড়ছে নানা রোগ](uploads/2024/04/17/1713370485.CTG_Medical.jpg)
চট্টগ্রাম জেলায় ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এখনো তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগর ও জেলার বাসিন্দারা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, হিটস্ট্রোকসহ মাথাব্যথার রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে এসব রোগে ভুগছেন শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং সেই ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে।
বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘরে ঘরে এখন অন্তত একজন সদস্য জ্বর, গলাব্যথা, কাশি, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন। প্রচণ্ড এই গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং যন্ত্রণাকে দ্বিগুণ করেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নবজাতক, শিশু ও বৃদ্ধরা।
নগর ও জেলার হাসপাতালগুলোতে গত সপ্তাহে ১০ শতাংশ বেড়েছে ডায়রিয়া ও কাশির রোগীর সংখ্যা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান খবরের কাগজকে বলেন, গড়ে ১০ শতাংশ রোগী বেড়েছে হাসপাতালে। দৈনিক ১৫-২০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। বেশির ভাগই শিশু। কেননা শিশুদের বেলায় ঝুঁকি নেওয়া যায় না। তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। জেলার সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগী ডায়রিয়া, জ্বর ও কাশি নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এ ছাড়া আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বহু রোগী। চট্টগ্রামের আশপাশের উপজেলাগুলোতে তীব্র গরমে এসব রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও জানা গেছে।
নগরের বাকলিয়ার জামাই বাজার এলাকার বাসিন্দা পপি আক্তারের দুই সন্তান ঈদের পরের দিন থেকে নগরের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। দেড় বছর বয়সী আরিয়ানের অবস্থা একটু ভালো হলেও ৯ মাসের ফারিয়াকে নিয়ে তিনি আছেন দুশ্চিন্তায়।
নগরের লালখান বাজারের বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী ফারুক মুনীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল থেকে আমার ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। আর মেয়ে কাশিতে ভুগছে কয়েক দিন ধরে। গরম-ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ায় রাতে রাতে জ্বর আসছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভ্রাট তো আছেই।’
নগরীর আসকার দীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা শুভেচ্ছা ঘোষ বলেন, ‘আমার চার বছরের শিশুটি পাঁচ দিন ধরে জ্বর ও কাশিতে ভুগছে। ঘরোয়া চিকিৎসায় জ্বর ভালো না হওয়ায় আমরা তাকে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাই। এরপর আমার শ্বশুরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
বায়েজিদ লিংক রোড়ের বাসিন্দা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘ঘরের তিন সদস্য অসুস্থ। কারও টানা কয়েক দিন ধরে জ্বর, কারও কফযুক্ত কাশি। আমি নিজেও মাথাব্যথায় আক্রান্ত। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ না থাকলে গোসলও করা যায় না। ঘর্মাক্ত দেহে এ এক সীমাহীন যন্ত্রণা।’
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসসহ অণুজীবগুলো বংশবিস্তার করার অনুকূল পরিবেশ খুঁজে পায়। ফলে বাড়ে ডায়রিয়া, কাশি, জ্বর ও হিটস্ট্রোক। এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকা জরুরি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ খবরের কাগজকে বলেন, তীব্র গরমে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ খুব বেশি ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হন মানুষ। প্রচণ্ড ঘামে ও ঘাম বসে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়। গরমে খাবার বেশি নষ্ট হয়, পঁচা-বাসি খাবার খেয়ে মানুষের পেটের সমস্যা হয়। ডায়রিয়া হয়। চর্মরোগ, অ্যাজমা, শ্বাসের রোগ হয়, কিডনি রোগীরা সমস্যায় পড়েন। এসব থেকে বাঁচতে হলে শীতল আবহাওয়ায় থাকতে হবে। কিছুটা খোলামেলা পরিবেশে থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, হাত-মুখ নিয়মিত ধুতে হবে। বারবার গোসল করতে হবে। পরিষ্কার খাবার খেতে হবে। বেশি বেশি পানি খেতে হবে। তরমুজ, স্যালাইন, লেবুর শরবত, ডাব খেতে হবে। সর্বোপরি খাবার গ্রহণে সতর্ক হতে হবে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৫ এপ্রিল ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ এপ্রিল ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১৭ এপ্রিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমলেও গরম কমছে না। কেননা বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়েছে। ফলে গরম অনুভূত হচ্ছে। আগামীকাল বা আজ (গতকাল) রাতে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১২ মিলিমিটার, ফরিদপুরে ২৩ মিলিমিটার, কিশোরগঞ্জে ৭ মিলিমিটার ও সিলেটে ৬ মিলিমিটার।