ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

জলাবদ্ধতায় অচলপ্রায় শিল্প-কলকারখানা

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ১৮ মে ২০২৪, ১০:৪৩ এএম
জলাবদ্ধতায় অচলপ্রায় শিল্প-কলকারখানা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভাওয়ালগড় ইউনিয়নে পানি নিষ্কাশনের সিংদীঘি খালের কালভার্ট ঘিরে আবর্জনার স্তূপ। শুক্রবার তোলা। ছবি : খবরের কাগজ

গাজীপুরের ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের বানিয়ারচালা-ভবানীপুর গ্রামে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র সিংদীঘি খালটি দখল, দূষণ আর অব্যবস্থাপনার কারণে ভরাট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট। পানি ঢুকে পড়ছে বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিসংশ্লিষ্টরা। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কয়েকটি কারখানার প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিকসহ দুই গ্রামের ৫০ হাজার বাসিন্দা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব বানিয়ারচালা-ভবানীপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সিংদীঘি (স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নাম) খালটি লবণদহ নদীতে গিয়ে পড়েছে। এটি প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। অপরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থার কারণে মাঝের কিছু অংশ বেদখল হয়ে গেছে। কয়েক জায়গায় গণহারে ময়লা ফেলায় হয়ে গেছে ভরাট। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পশ্চিম পাশে অবস্থিত আবুল কাশেমের নির্মাণাধীন ফ্যাক্টরির বর্জ্য ও মাটি দ্বারা খালটি প্রায় ভরাট। রোডের আরেক অংশ কালভার্টের পূর্ব পাশে ময়লা ফেলার স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। 

এ ছাড়া রোডের পশ্চিম পাশে প্যারাগন গ্রুপের সিমটেক্স লিমিটেডের ভেতর দিয়ে অবস্থিত ড্রেন ভরাট করে শুধু পাইপের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই পানি আর বের হতে পারে না। বৃষ্টির সময় উজানের পানি নেমে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

পানি নিষ্কাশনের একমাত্র বানিয়ারচালা-ভবানীপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সিংদীঘি খাল সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকার বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী। কয়েক বছর ধরে বারবার আবেদন করা হলেও এখনো কারও সাড়া মেলেনি। ফলে দিন দিন আরও নাজুক হয়ে পড়েছে খালটি। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে খুবই বেহাল দশা এটির। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের দুর্ভোগ নিয়ে শঙ্কিত-উদ্বিগ্ন ভুক্তভোগীরা।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির বিষয়ে গত বছরের ৯ অক্টোবর জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডি করেন বিজি কালেকশন লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসিমুল হাসান কচি। গত বছরের ৫ অক্টোবর বৃষ্টিতে এলাকায় তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাটির নিচতলায় পানি প্রবেশ করে। মেশিনপত্রসহ বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল, সুতা, কাপড়, রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক ও অ্যাকসেসরিজ নষ্ট হয়। এতে বিজি কালেকশন লিমিটেডের প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যমানের সম্পদের ক্ষতি হয়। শুধু বিজি কালেকশনই নয়, এতে আরও কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। 

পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য দুই বছর ধরে সরকারি বিভিন্ন মহলকে অনুরোধ জানায় বিজি কালেকশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ২০২২ সালের ২১ জুন গাজীপুর জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়। একই বছরের ৪ জুলাই শ্রীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল সহকারী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করে সংস্থাটি। কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় পুনরায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ২২ জানুয়রি গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়। 

স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যে কারণে বন্ধ হয়ে গেছে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। তার পরও যতটুকু ছিল, তাও বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলে বন্ধ করে ফেলেছে। ফলে ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই এলাকা তলিয়ে যায়। বাড়িঘর, জমির ফসল নষ্ট হয়, মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা জানিয়েছি। কিন্তু স্থানীয়ভাবে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত কেউই গ্রহণ করেননি।’

বিজি কারখানার অডিট ও অ্যাকাউন্টস বিভাগের এজিএম মো. ইনামুল হক বলেন, ‘এই এলাকার একমাত্র পানি নিষ্কাশনের খালটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কালভার্টের নিচে ময়লা ফেলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। গত দুই বছরে নিজস্ব অর্থায়নে সিটি করপোরেশন থেকে গাড়ি এনে কয়েকবার আমরা খালটি পরিষ্কার করেছি। প্রতিবার চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ পড়ে। কিন্তু নতুন করে আবার ময়লা ফেলা হয়। গাজীপুরের ডিসিসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিলেও আজও সুরাহা মেলেনি।’

বানিয়ারচালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরকার বলেন, ‘এলাকার লোকজন নিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে দুবার খালটি পরিষ্কার করেছি। রাতে-দিনে পাহারা দেওয়ার জন্য পাহারাদার বসানো হয়েছে। কিন্তু ভোররাতে বিভিন্ন কোম্পানি ট্রাকে করে ময়লা এনে ফেলে চলে যায়। ময়লা ও জলাবদ্ধতার যন্ত্রণায় এলাকার মানুষজন অতিষ্ঠ।’ 

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, ‘আমি এখনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের চিঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি খাল হলে পানি নিষ্কাশনে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবন্ধকতা কেউ সৃষ্টি করতে পারবে না। এলাকাবাসীর জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনে প্রজেক্ট নিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে।’

সক্রিয় আনসার আল-ইসলাম, ভারতেও চালাচ্ছে জঙ্গি তৎপরতা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:২০ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
সক্রিয় আনসার আল-ইসলাম, ভারতেও চালাচ্ছে জঙ্গি তৎপরতা

দেশে থেমে থেমে জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। একেকটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করার পর আরেকটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এসব জঙ্গি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ভার্চুয়ালি (অনলাইন) যুক্ত। অনলাইনে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও টেলিগ্রাম অ্যাপস বা অন্য কোনো নতুন অ্যাপসের মাধ্যমে ছদ্মনামে তারা প্রচার চালাচ্ছে। অনলাইনে প্রচারণা চালানোর পর জঙ্গিরা যখন বাস্তবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে যায়, ঠিক তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের বেশ কয়েকজন সদস্য ধরা পড়ার পর গোয়েন্দারা বলছেন, বর্তমান সময়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলাম বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা দেশ-বিদেশে উগ্রবাদী মতবাদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও নানামুখী সন্ত্রাসী হামলার ছক এঁকে উসকানিমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্নভাবে সক্রিয় হয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩২৫ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ ও র‌্যাবের সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৪২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে র‌্যাবের অভিযানে ১২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিট। 

এদিকে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) একটি সূত্র খবরের কাগজকে জানায়, চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের ১৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এটিইউ।

জঙ্গিদের এমন তৎপরতা ও সার্বিক বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসির প্রধান) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সিটিটিসির গোয়েন্দারা জঙ্গি দমনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। আমরা জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে মনিটরিং করি। জঙ্গিরা একশ্রেণির মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করে। এদের কাজ হলো উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা। এরা যেকোনো সময় সক্রিয় হতে পারে। তবে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের সদস্যরা আমাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। তাদের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছেন।’

নিষিদ্ধঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল-ইসলাম’ ভিন্ন নামে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দারা বলছেন, সম্প্রতি ‘আস-শাহাদাত’ ওরফে ‘আনসার আল-ইসলাম’ গ্রুপের নামে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহসহ নানা তৎপরতার সময় তিন জঙ্গি সদস্যকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৭।

তাদের ধরার পর র‌্যাব জানায়, বর্তমান সময়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলাম। তারা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। 

এ বিষয়ে র‌্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. শরীফ উল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য শিক্ষিত ও উগ্র উঠতি বয়সীদের আকৃষ্ট করে দেশ-বিরোধিতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা ও বেশ কিছু তথ্য স্বীকার করেছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতার উসকানিমূলক বক্তব্য শুনে ও দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং ওই সংগঠনে যোগ দেয়। পরে তারা ‘আনসার আল-ইসলাম’-এর মতাদর্শে পরিচালিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এরা বেশ ভয়ংকর। আনসার আল-ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠনের সদস্যদের তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করে কাজ করে।

এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করত এবং সংগঠনের সদস্যদের শারীরিক প্রশিক্ষণ দিত। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য টার্গেট করে কাজ করছে।

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের সদস্যদের আমাদের এটিইউ নজরে রাখছে এবং তাদের ধরতে আমাদের গোয়েন্দাদের বিভিন্ন অভিযান চলমান রয়েছে।’

জঙ্গিরা সম্প্রতি তাদের সাংগঠনিক ও নানা বিষয় নিয়ে তৎপর হচ্ছে- এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাদের সাইবার ইউনিটও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জঙ্গিরা যাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে, সেই বিষয়ে লক্ষ রেখে আমরা সতর্ক আছি এবং কাজ করছি।’

এদিকে দেশের বাইরেও কর্মপদ্ধতিতে বেশ খানিকটা পরিবর্তন এনেছে আনসার আল-ইসলাম। সম্প্রতি শাহাদাত সংগঠনের তিনজন সদস্যকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে এমনটাই মনে করছেন সে দেশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের (এসটিএফ) কর্মকর্তারা।

এসটিএফ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে জেএমবির নেটওয়ার্ক দুর্বল হতেই তার জায়গা নিয়েছিল নব্য জেএমবি ও আনসার জঙ্গিরা। তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে বাংলাদেশি সংগঠন আনসার আল-ইসলাম জঙ্গিগোষ্ঠী কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে তাদের নেটওয়ার্ক পাকাপোক্ত করে। 

আনসার আল-ইসলাম সংগঠনটি ভারতের মাটিতে মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীদের নিশানায় রাখলেও  প্রকাশ্যে এখনো খুনখারাবি করেনি। বরং তাদের লক্ষ্য, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের সংগঠনে যুব সমাজের একটা অংশকে টেনে আনা।

পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশি যুক্তিবাদী লেখকদের ওপর হামলা অনেকটাই কমে এসেছে। আনসার আল-ইসলাম সেই সময় থেকে বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ, আসমসহ বিভিন্ন রাজ্যে জাল ছড়িয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ভারতে একশ্রেণির উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের সংগঠিত করার কাজটি নিঃশব্দে করে চলেছে আনসার আল-ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন। নীতিগত দূরত্ব থাকলেও জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের ভারতীয় শাখা জেএমএইচের সাহায্যও পাচ্ছে আনসার আল-ইসলাম।

ভারতে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের যোগাযোগ নিবিড়। ভারতের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো  প্রবলভাবে সক্রিয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে।

নজরদারিতে অনেক মন্ত্রী-এমপি

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:১৬ পিএম
নজরদারিতে অনেক মন্ত্রী-এমপি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য জনসমক্ষে আসার পর সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

রবিবার (৩০ জুলাই) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক খবরের কাগজকে বলেছেন, ব্যক্তির দায় সরকার কোনোভাবেই বহন করবে না। যারা দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের বিষয়টি ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছেন। এ অবস্থায় আতঙ্কে রয়েছেন মন্ত্রী-এমপিরাও।

জানা গেছে, তাদের অনেকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নজরদারিতে রয়েছেন।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার নিজস্ব মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন, তথ্য সংগ্রহ করছেন।

বিশেষ করে দুর্নীতিবাজ হিসেবে ‘পাবলিক পারসেপশন’ রয়েছে, এমন কর্মকর্তা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি।

ঘনিষ্ঠদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারও ব্যক্তিগত দুর্নীতির জন্য সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ হোক- তা হতে দেবেন না তিনি।

সূত্রমতে, দুর্নীতির বিষয়ে সাম্প্রতিক কালে গণমাধ্যমে উঠে আসা চিত্র দেখে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই বিব্রত হয়েছেন।

ঘরোয়া আলোচনায় তাদের কেউ কেউ বলছেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। সরকারের শুভাকাঙ্ক্ষীরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইতিবাচক পরামর্শ দিয়েছেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান জানান দিয়ে বক্তৃতা করছেন।

সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, ধরা হবে।’ 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের কারও ছাড় নেই। আমি সবার উদ্দেশে বলছি, বাড়াবাড়ি করবেন না। ক্ষমতার দাপট কেউ দেখাবেন না। কাউকে ক্ষমা করা হবে না। এটা শেখের (শেখ মুজিবুর রহমানের) বেটি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দেখিয়ে দেবেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কতটা কঠোর হতে পারেন।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার রয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। আর এ কারণেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এমপি রবিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে বদলি কোনো কার্যকর শাস্তি হতে পারে না। বরং দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্পদের সঠিক হিসাব বের করতে হবে এবং তার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া দরকার। অবশ্যই তাকে তড়িৎবেগে চাকরিচ্যুত করতে হবে। বদলি কোনো শাস্তি হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, সরকারি চাকরিজীবীর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ও সম্পদ হচ্ছে তার চাকরিটি। দুর্নীতিপরায়ণরা জনগণের শত্রু, দেশের শত্রু।’

সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সদস্য মতিউর রহমান, প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করে এবং সম্পদ জব্দ ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়।

দুদক একের পর এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে তাদের বিপুল সম্পদ জব্দ ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের শক্ত অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতিবাজদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে প্রশংসিত হচ্ছে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান।

সরকারের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র খবরের কাগজকে জানিয়েছে, গত সরকারের (টানা তৃতীয় মেয়াদের) শুরুর দিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং থানা-পুলিশের মাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই ধারা অব্যাহত না থাকলেও নিজস্ব মাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করা এসব তথ্যের ভিত্তিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেন তিনি। টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের আগে সংগ্রহ করা তথ্য কাজে লাগান প্রধানমন্ত্রী। আর সে কারণেই আগের সরকারের একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বাদ পড়েন, এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও রয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের দুর্নীতির চিত্র গণমাধ্যমে আসার পর সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আবার বিপুল উদ্যমে শুরু করেছে তথ্য সংগ্রহ। তারা সচিবালয়ে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের খোঁজখবর রাখছে। এমনকি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তরে কারা আসছেন- তাদের সঙ্গে সম্পর্ক কী, এসব দর্শনার্থী কী কাজ নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তরে ঘুরছেন- সেই খোঁজখবরও নিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।

সরকারের এক প্রতিমন্ত্রীর দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি সংবাদ গণমাধ্যমে আসার পর তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠজন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি এলাকার পাশাপাশি ঢাকায় প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এমনকি সচিবালয়ে তার (প্রতিমন্ত্রীর) দপ্তরেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। তারা এলাকা থেকে আসা নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব গতকাল রবিবার খবরের কাগজের এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা এসেছে তার মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি ফাইল যেন ভালোভাবে পড়ে-দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারলে তা-ও সরকারের উচ্চপর্যায়কে জানাতে বলা হয়েছে।

জিআই স্বত্ব পেল বাংলাদেশের ৭ পণ্য

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
জিআই স্বত্ব পেল বাংলাদেশের ৭ পণ্য
জিআই পণ্য

সাত পণ্যের জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) থেকে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। ডিপিডিটির তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সাত পণ্যের মধ্যে আছে নরসিংদীর লটকন, মধুপুরের আনারস, ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ, শেরপুরের ছানার পায়েস, নওগাঁর নাগ ফজলি আম, দিনাজপুরের লিচু ও সুন্দরবনের মধু।

আরও ২৫টি পণ্যের জিআই সনদ দেওয়ার জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জিআই সনদ দেওয়া যায় কি না এমন পণ্যের তালিকায় আছে যশোরের খেজুর গুড়, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা, জামালপুরের নকশি কাঁথা, মৌলভীবাজারের আগর-আতর, রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম, মুক্তাগাছার মণ্ডা, রাজশাহীর মিষ্টি পান, গোপালগঞ্জের রসগোল্লাসহ অন্যান্য। 

ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো পণ্যের জিআই সনদ যেন অন্য কোনো দেশ নিয়ে না নেয়, এ জন্য আমরা তৎপর আছি। সাত পণ্যের জিআই সনদ দেওয়ার কাজ শেষ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সাত পণ্যের নাম সুবিধামতো সময়ে ঘোষণা করা হবে। আরও ২৫ পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’ 

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক ও কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের আমরা বলেছি যে আপনার এলাকায় কী কী জিআই পণ্য আছে, সেটা নিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করুন। আমরা আপনাদের সহায়তা করব। এসব উদ্যোগের কারণেই অগ্রগতি হয়েছে। অনেক আবেদন পাওয়া গিয়েছে।’ 

ডিপিডিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোনো দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, সেই সঙ্গে ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহ্যগতভাবে যে পণ্যগুলোকে ‘নিজস্ব’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যেসব পণ্য এই স্বীকৃতি পায়, সেগুলোর মাঝে ভৌগোলিক গুণ, মান ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। একটি পণ্য যখন জিআই স্বীকৃতি পায়, তখন সেটিকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, জিআই সনদ পাওয়া পণ্যগুলোর দেশে-বিদেশে আলাদা কদর থাকে। শুধু তা-ই নয়, সনদপ্রাপ্তির পর ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি একাধারে উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। অন্য কোনো দেশ বা অন্য কেউ তখন আর এই পণ্যের মালিকানা বা স্বত্ব দাবি করতে পারে না। নিয়ম অনুযায়ী কৃষিপণ্য, প্রকৃতি থেকে আহরিত সম্পদ ও কুটির শিল্পকে এই সনদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব জিআই পণ্য আছে, সেখানে এর সবগুলো ধরনই রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এরপর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধনের জন্য কোনো ব্যক্তিসংঘ, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে ডিপিডিটিতে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তসহ আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর সেগুলোকে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে আবেদনকারীকে পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিবেচনা করার পর সব ঠিক থাকলে সেই জার্নালে প্রকাশ করা হয়। জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ যদি সেই পণ্যের বিরোধিতা করতে চান, তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ দুই মাস সময় ধরা আছে। বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো পণ্যের জন্য কেউ আবেদন করার মানে এই নয় যে সেই সব পণ্য জিআই সনদ পাওয়ার মতো যোগ্য বা নিশ্চিতভাবে এই সনদ পেয়ে যাবে। ডিপিডিটিতে যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। যাচাই-বাছাই করার পর এগুলোর কোনো কোনোটি জার্নালে যাওয়ার আগেই বাদ পড়তে পারে। আবার জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে যদি কেউ এগুলোর বিরোধিতা করেন এবং সেই অভিযোগ খণ্ডানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ না থাকে, তাহলেও তা বাদ যেতে পারে।

বাংলাদেশি যেসব পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে: জিআই আইন বিধিমালা পূরণ করে এখন পর্যন্ত মোট ২১টি পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে। সেগুলো হলো জামদানি শাড়ি, বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাংলাদেশের কালোজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকার মসলিন, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের শীতলপাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।

ভাঙনে হুমকির মুখে বাঁধ বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার শঙ্কা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:০৪ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:০৫ এএম
বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার শঙ্কা
সারিয়াকান্দি উপজেলার ইছামারা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন আতঙ্কিত মানুষ। ছবি: খবরের কাগজ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ যমুনা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। এবার বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ হারাতে পারেন তাদের বাড়িঘর আর নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি। 

ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দির কামালপুর, ইছামারা ও ধুনটের শওরাবাড়িতে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। আতঙ্কে বাঁধসংলগ্ন এলাকা থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইছামারা এলাকায় যমুনা নদীভাঙছে মূল বাঁধ থেকে ১৫০ মিটারের মধ্যে। ভাঙন এলাকায় প্রতিরক্ষার কাজ বন্ধ থাকায় ওই বাঁধ কত দিন পর্যন্ত টিকবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ, ভাঙনের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

সারিয়াকান্দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ন কবির জানান, জুনের মাঝামাঝি যমুনা নদীর ডান তীরে ভাঙন দেখা দিলে প্রতিরক্ষার কাজ শুরু করা হয় ৬৫০ মিটার এলাকায়। তবে এখনো কাজ বাকি রয়েছে ৫৫০ মিটার। তিনি বলেন, ‘বাঁধ রক্ষায় ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ হাজার জিও ব্যাগ ও ৭ হাজার জিও টিউব ফেলা হয়েছে। ফলে কয়েকটি পয়েন্টে এখন ভাঙন বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু কোনো বরাদ্দ না থাকায় প্রতিরক্ষার কাজ বন্ধ হয়ে আছে ইছামারা এলাকায়। এতে ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা। এ বাঁধটি নিরাপদ করতে কত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব প্রয়োজন? এ প্রশ্নের জবাবে মো. হুমায়ন কবির বলেন, ‘নদীভাঙন আরও তীব্র না হলে ৫০ হাজার জিও ব্যাগ এবং ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার জিও টিউব হলেই প্রাথমিকভাবে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসই) আরিফুর রহমান জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর থেকে ধুনট উপজেলার শওরাবাড়ী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার তীর স্থায়ীভাবে রক্ষায় নেওয়া ৮২৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সোনাতলা থেকে ধুনট পর্যন্ত প্রায় ৪৬ কিলোমিটার তীরে ভাঙন পুরোপুরি বন্ধ হবে। এ মুহূর্তে ভাঙন রোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ৫০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ডান তীরে ভাঙন অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য ‘সবুজ পাতা’য় স্থান পাওয়া ৮২৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।’ এ প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত বলে মো. আরিফুর রহমান জানান, সার্ভের কাজ শেষ হলেই এলাকার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদন হবে। 

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সারিয়াকান্দির এলাকাগুলোতে রবিবার (৩০ জুন) গিয়ে দেখা যায়, মানুষ আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ থেকে অনেকেই তাদের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। 

ওই উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আজাহার আলী জানান, গত বছর জুন থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তার এলাকায় বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন অন্তত ৪ হাজার মানুষ। যেভাবে নদীভাঙছে, তাতে এ বছর আরও মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারেন এ আশংকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন,‘ইতোমধ্যেই বাঁধে আশ্রয় নেওয়া অনেকেই বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। ইছামারা ও কামালপুরের অনেকেরই জমি চলে গেছে নদীর পেটে।’

ইছামারা গ্রামের মো. বিল্লাল আখন্দের সঙ্গে কথা হয় যমুনার তীরে। যমুনার ভাঙনে তার বসতবাড়ির ১৫ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। চরের ভেতর তার ৫-৬ বিঘা জমি আছে। কিন্তু সেগুলো আর কত দিন টিকে থাকবে, তা নিয়ে তিনি বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। বাড়িঘর সরিয়ে কোথায় নিয়ে গেছেন জানতে চাইলে মো. বিল্লাল আখন্দ বলেন, ‘বাঁধের ওপর গেছি। সেখানে আরও মানুষ তাদের বাড়িঘর তুলেছেন।’

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের প্রধান কারণ অসতর্কতা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের প্রধান কারণ অসতর্কতা
প্রতীকী ছবি

দেশে গ্যাস সিলিন্ডার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় বেশি সংখ্যায় বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে, বাড়ছে হতাহতের ঘটনাও। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার যেন মরণফাঁদ। সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের অসতর্কতাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে সাধারণত গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে থাকা সেই গ্যাস থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ সৃষ্টি হয়।

গত ১৬ জুন ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসার রান্নাঘরে বিস্ফোরণে রকসি আক্তার নামে এক গৃহবধূ দগ্ধ হয়ে মারা যান। রকসির শরীরের ৫৫ শতাংশ দগ্ধ হয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশের একটি ভবনের নিচতলায় রান্নাঘরে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে শিশুসহ একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়।

১১ জুন আদাবরে তুরাগ হাউজিংয়ের একটি গ্যারেজে জমে থাকা গ্যাসের আগুনে ঘুমের মধ্যে কবির হোসেন নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সারা এলাকায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

১০ জুন মধ্য বাড্ডার ডিআইটি রোডের বাসায় জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে শান্তা আক্তার নামের এক নারী মারা যান। শান্তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন পাশের বাসার চম্পা খাতুন ও তার স্বামী আয়নাল। তারা বলেন, ‘আমাদের বাসায় গ্যাসের সংযোগ না থাকায় সিলিন্ডার ব্যবহার করি। এই ঘটনার পর থেকে আমরা আতঙ্কে আছি। গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালাতে ভয় পাচ্ছি।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানহীন সিলিন্ডারে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার ব্যবস্থা করা না গেলে এমন দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।

বুয়েটের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মো. আশিকুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সিলিন্ডারের মেয়াদ না থাকা। অনেক সময় নকল সিলিন্ডারের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। যা দেখার কেউ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সিলিন্ডার মনিটরিংয়ের বড় অভাব রয়েছে। বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে মনিটরিংয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গ্যাসের সিলিন্ডারের মধ্যে কোনোভাবেই যাতে হাইপ্রেশার না হয়। হাইপ্রেশার চরমভাবে ক্ষতিকর।’

তিনি বলেন, ‘সিলিন্ডারের ভেতরে অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ থাকলেও অনেক সময় চলন্ত গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। অনেকে এর ব্যবহারবিধি জানেন না। আমি মনে করি, জেনে বুঝে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করলে বিস্ফোরণের সংখ্যা কমে আসবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। গ্রাহকদের অসাবধানতার কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। 

ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, গেল বছর ২০২৩ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে ৪ শতাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। এ ছাড়া চলতি বছরের ৬ মাসে ২১৫টি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক মানুষ মারা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্যাস সিলিন্ডারের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ১৫ বছর। অথচ ২৮ বছরের পুরোনো সিলিন্ডারেও এলপিজি বিপণন হচ্ছে। মূলত মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সিলিন্ডারে গ্যাস বিপণনের কারণেই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। বর্তমানে গ্যাস বাজারের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন বেসরকারি এলপিজি প্রতিষ্ঠান। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটি, অসচেতনতা ও অসতর্কতার ফলে সিলিন্ডার দুর্ঘটনা বাড়ছে। রান্নার কাজকে সহজ করতে নিয়ে সিলিন্ডার যেন মৃত্যুদূতে পরিণত হচ্ছে। তাই গ্যাসসংক্রান্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’