![লড়াইটা নেতৃত্বেরও](uploads/2023/11/15/1700025101.Two-Captain--Niloy.jpg)
বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মুম্বাইতে আজ মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ভারত ও নিউজিল্যান্ড। আইসিসির গেল কয়েক আসরের বাস্তবতায় যে ম্যাচের ঝাঁজ অন্যসব ম্যাচের চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে আলাদা। বারবার এই নিউজিল্যান্ড নামক শেকলেই আটকা পড়েছিল ভারতের দু হাত। এবার সেমির আগে গ্রুপ পর্বে অনায়াসে নিউজিল্যান্ড শিকল ছিন্ন করায় ভারতের শিরোপা জেতার পথে নিউজিল্যান্ড বড় বাধা আর হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও সেই অনুমান কতোটা বাস্তবসম্মত তা জানা যাবে সেমিতে দুই দলের ম্যাচের ফলাফলে।
ইতিহাস সামনে এনে ভারতের জন্য সেমিফাইনালের এই ম্যাচকে প্রতিশোধের লড়াইয়ের তকমা হয়তো অনেকেই দিতে চাইবেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমি ছাড়াও ২০১৬ ও ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া এবং পরপর দুই বার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়েও ভারত আটকে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের কাছেই। তারপরও ঘরের মাঠ ও ব্যাটারদের দুর্দান্ত ফর্মের পাশাপাশি অধিনায়ক রোহিত শর্মার নেতৃত্বে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারতকে। ব্যাটিংস্তম্ভ বিরাট কোহলি ৫৯৪ রান নিয়ে বিশ্বকাপে রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন শীর্ষে। ৫০৩ রান নিয়ে একই তালিকায় চতুর্থস্থানে অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
এবারের বিশ্বকাপে দলকে এক সুতোয় গেঁথেছেন রোহিত। মোহাম্মদ শামির ওপর আস্থা রেখে একাদশে ফিরিয়েছেন। সেই শামিই এখন ভারতের বোলিংয়ের তুরুপের তাস। মাঠে রোহিতের শরীরী ভাষা প্রভাবিত করছে দলের বাকি সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধিতেও। ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় রোহিতের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে রোহিত একজন নেতায় পরিণত হয়েছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
নেতৃত্ব নিয়ে ভারত আত্মতুষ্টিতে ভুগলেও পিছিয়ে নেই নিউজিল্যান্ডও। চলতি বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে এখন পর্যন্ত মাত্র তিন ম্যাচ মাঠে নামলেও প্রতি ম্যাচেই ব্যাট হাতে দুই অর্ধশতকে ১৭৯ রান করেছেন কেন উইলিয়ামসন। উইলি দলে ফিরলে দল আপনা-আপনি চাঙা হয়ে যায়। কিউইদের মনোবল ও শরীরী ভাষায় দেখা যায় বাড়তি ছন্দ। সেই উইলিয়ামসন সেমির ম্যাচে মাঠে নামবেন কাঁধে অধিনায়কত্বের ভার নিয়েই। তাই বলা যায়, সেমিফাইনালে এবারের লড়াইটা হেবে নেতৃত্বেরও।
ভারতের শিরোপা খরাটা ঠিক এক দশকের। ২০১৩ সালে সবশেষ ইংল্যান্ডের মাটিতে জিতেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। তারপর থেকে ৮টি আইসিসি আসরের তিনটিতে ফাইনালে পা রাখলেও ছুঁয়ে দেখা হয়নি শিরোপা। এবার ঘরের মাঠে কাঙ্ক্ষিত সেই শিরোপার খোঁজে টিম ইন্ডিয়া। রোহিতের নেতৃত্বে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হারেনি ভারত। এবার শিরোপা ঘরে নিতে পারলে থাকছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ।
অধিনায়কের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার যে ব্যাপারটা তা এবার পুরোপুরি পালন করছেন রোহিত শর্মা। অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া সব ম্যাচেই তিনি ভারতকে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। তার তৈরি করে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত উড়ছে ভারত। অন্যদিকে উইলিয়ামসনের সব ম্যাচে না থাকা কিউইদের ভোগায়নি সেমিতে পৌঁছাতে! খালি চোখে এমনটা মনে হলেও আদতে কিন্তু তা নয়। এবার সেমিফাইনালে শেষ দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্রর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েও নিউজিল্যান্ডের বেগ পেতে হয়েছে শেষ চারের জায়গা পাকাপোক্ত করতে। উইলিয়ামসনের বাকি ম্যাচগুলোতে না থাকা যার অন্যতম কারণ।
দলে থাকা তিন ম্যাচের দুটিতেই নিউজিল্যান্ড জয় পেয়েছিল। এতে করে স্পষ্ট উইলিয়ামসনের মাঠে থাকার প্রভাব ঠিক কতখানি। ২০১৬ সালে উইলিয়ামসন দায়িত্ব নেওয়ার পর চারটি আইসিসি আসরের নকআউটে নিউজিল্যান্ড উত্তীর্ণ হয়ে শিরোপাও জিতেছে একটি। নিয়মের মারপ্যাঁচে ২০১৯ বিশ্বকাপে পরাজিত না হলে সাফল্যের মুকুটে জমা হতে পারত আরেকটি পালক।
২০১৯ বিশ্বকাপে সুপার ওভারসহ ১০২ ওভারের ফাইনাল টাই হয়ে গেলে, মূল ম্যাচে বাউন্ডারির হাঁকানোর সংখ্যায় এগিয়ে থাকায় চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। এই নিয়মের মারপ্যাঁচে না পড়লে কেন উইলিয়ামসন একাই সে বিশ্বকাপ কিউইদের জিতিয়েছেন এমন রব যে উঠত তা নিয়ে দ্বিধা নেই। কেননা, টুর্নামেন্ট সেরা উইলি ব্যাট হাতে ৫৭৮ রান করে দলকে ফাইনাল তুলেছিলেন, তা সর্বজনবিদিত। বল হাতে ফার্গুসন, বোল্ট আর নিশাম ভালো করলেও ব্যাট হাতে কিউই দলের আর কেউই খেলতে পারেননি উইলিয়ামসনের সমমানের। আর এটাই প্রমাণ করে ২০১৯ বিশ্বকাপে কীভাবে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন উইলিয়ামসন।
এই বিশ্বকাপে ভারতকে সবাই ফেবারিটের তালিকায় ওপরে রাখলেও বড় আসরে উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড কতটা ভয়ঙ্কর তা সবারই জানা। তবে সেমির টিকেট কাটতে জয়ের বিকল্প নেই দুই দলের। রান উৎসবের বিশ্বকাপে এই জয় আদায়ে প্রধান ভূমিকা রাখবে ব্যাটাররা। দু দলের নেতৃত্বে আবার ক্রিকেটের দুই সেরা ব্যাটার। নেতৃত্ব আর ব্যাটিংয়ে দুজনই চাইবেন দুজনকে ছাড়িয়ে দলকে নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছাতে। তাই এই লড়াইটা দুই অধিনায়কের মাঝে তথা নেতৃত্বেরও।