![লাভের মুখ দেখছে রাঙামাটির বিএফআইডিসি](uploads/2024/03/03/1709458897.Rangamati-Kaptai-BFIDC.jpg)
লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটির কাপ্তাই বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি)। একসময় প্রতিষ্ঠানটিতে গাছের বৈদ্যুতিক খুঁটি, রেলের স্লিপার, সেতুর পাটাতন তৈরি করা হতো। কিন্তু কাঁচামালসংকট আর আধুনিক প্রযুক্তির ধাতব উপাদানের ব্যবহার বাড়ায় লোকসানে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে আধুনিক পরিবেশবান্ধব টেকসই কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করে লাভের মুখ দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার আসবাবপত্র বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা লাভ হয়েছে। আসবাবপত্র সরবরাহে সরকারি অগ্রাধিকার পেলে আবারও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বনায়নের সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্য ১৯৫৯ সালে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ১০০ একর জমির ওপর বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আসবাবপত্র তৈরি করার জন্য রাবার গাছ প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সেগুন, গামারিসহ অন্যান্য কাঠও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাছ কাটার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে কাঠের সিজনিং ও ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে আসবাবপত্রের স্থায়িত্ব ৪০ থেকে ৫০ বছর বাড়ানো হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই হওয়ায় দিন দিন এসব আসবাবপত্রের চাহিদাও বাড়ছে। মূলত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই প্রধান ক্রেতা।
বিএফআইডিসি বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার আসবাবপত্র বিক্রি করছে। ৭৪ শ্রমিক-কর্মকর্তার বেতনসহ যাবতীয় ব্যয় পরিশোধের পর গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ২৭ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা লাভ করেছে। এতে গতি বেড়েছে উৎপাদনেও।
কাপ্তাই বিএফআইডিসির বিপণন কর্মকর্তা আল আমীন বলেন, ‘এখানে মূলত বন বিভাগের সেগুন ও অন্যান্য কাঠ এবং আমাদের নিজস্ব বাগানের রাবার কাঠ আসে। রাবার কাঠ প্রয়োজনীয় আকারে কেটে করে সিজনিং ও ট্রিটমেন্ট করে আসবাবপত্র তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়। আর বনজ কাঠ গোলকাঠ এবং আসবাবপত্রের চাহিদা অনুযায়ী কেটে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।’
কারিগরি কর্মকর্তা জুয়েল হোসেন বলেন, ‘চেয়ার, টেবিল, আলমিরা, ওয়্যারড্রোব, দরজাসহ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী আসবাবপত্র তৈরি করে থাকি। চাহিদামতো এসব আসবাবপত্রে ম্যানুয়াল ও লেকার পলিশ দিয়ে পৌঁছে দিই। আমাদের বড় ক্রেতা শিক্ষা অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র, ঢাকা ও খুলনা আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এর বাইরেও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চাহিদাপত্র দিয়েছে।’
সহ-ব্যবস্থাপক বিলাশ কুমার বিশ্বাস, ‘এখানকার আসবাবপত্র ও কাঠের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো। আসবাবপত্র উৎপাদনের আগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সিজনিং ও ট্রিটমেন্ট করায় এর স্থায়িত্ব বেশি। ৪০ থেকে ৫০ বছরের ভেতরে কোনো ঘুন ও পোকা ধরবে না। কাঠের সঠিক পরিমাপ ও পুরুত্ব শতভাগ নিশ্চিত করা হয়।’
কাপ্তাই বিএফআইডিসি ইউনিট প্রধান তীর্থ জিৎ রায় বলেন ‘সম্ভাবনাময় এই শিল্প খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য এ কারখানা থেকে কিনে তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এ ছাড়া আরও কর্মসংস্থান বাড়বে। আমদানিনির্ভরতাও কমে আসবে।’
তিনি আরও বলেন ‘বন বিভাগের সরকারি বাগান বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ। কাঁচামাল সংকটে দীর্ঘদিন লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন কৌশল বদলে আধুনিক মানের পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করা হচ্ছে। এতে বছরে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা লাভ হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার পরিমাণ বাড়লে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্বও আরও বাড়বে।’