পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কান পেসার নুয়ান থুসারা জাগিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। সিলেটে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে সেই সম্ভাবনাকে বাস্তুবেও রূপ দেন তিনি। হ্যাটট্রিক বলে যখন স্ট্রাইকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তখন তো এক ধরনের নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল থুসারার হ্যাটট্রিক!
দেশের ক্রিকেটে বড় এক নাম মাহমুদউল্লাহ। বিপদে দলের ত্রাণকর্তা। তার ব্যাটে ভীতি জাগে প্রতিপক্ষ শিবিরে, সেই ব্যাটেই আবার কম্পন ধরে হ্যাটট্রিক বলে। তাতেই দুর্ভাগ্যের এক পরিসংখ্যানে জড়িয়ে পড়েন পঞ্চপাণ্ডবের এই সারথি। সেটা হলো- পাঁচবার হ্যাটট্রিক বল মোকাবিলায় চারবার বোলারের টানা তৃতীয় শিকার বনেছেন মাহমুদউল্লাহ। এই পরিসংখ্যানই বলছে, তাকে সামনে পেলেই যেন বোলারের জন্য সহজ হয়ে যায় হ্যাটট্রিক আদায় করা।
হ্যাটট্রিক নিয়ে দারুণ এক ঘটনা রয়েছে মোহাম্মদ আশরাফুলের। ২০০৪ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সেই ম্যাচে একই ইনিংসে দুবার হ্যাটট্রিক বল মোকাবিলা করতে হয় আশরাফুলকে। দুবারই বোলিংয়ে থাকা ইরফান পাঠানকে হতাশ করেছিলেন ‘আশার ফুল’খ্যাত এই ব্যাটার। টেস্টটি বাংলাদেশ ইনিংস এবং ১৪০ রান ব্যবধানে হেরেছিল। তবে পাঠানের স্বপ্নপূরণের পথে আশরাফুল বাদ সেধে প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন ৬০ রানে।
টেস্টে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ১৭ বছর পর। সেটাও ছিল ভারতের অ্যাওয়ে টেস্ট। ২০২১ সালে লর্ডস টেস্টে একই ইনিংসে দুবার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ এবং ইশান্ত শর্মা। দুবারই ব্যাটিংয়ে ছিলেন জো রুট এবং শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৮০ রানে। যদিও হার এড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। এসব গল্প যেন রূপকথার মতোই ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহর কাছে, যার হ্যাটট্রিক ভীতির শুরু ২০১৫ সালে, দেশের মাটিতে।
ওই বছরের ১০ জুলাই মিরপুরে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টিস্নাত ম্যাচটিতে অভিষিক্ত কাগিসো রাবাদা করেন হ্যাটট্রিক। প্রথমে তামিম ইকবাল। এরপর লিটন দাস। টানা তৃতীয় বলে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লিউ আউট করে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখেন রাবাদা। ২০১৮ সালে একই ভেন্যুতে একই ফরম্যাটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেহান মাদুসাঙ্কাকে হ্যাটট্রিক উপহার দেন এই ব্যাটার। লঙ্কান পেসারের টানা তিন বলে আউট হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেন এবং মাহমুদউল্লাহ।
মজার বিষয় হলো- ম্যাচটিতে মাদুসাঙ্কারও আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল এবং সেটাই ওয়ানডেতে তার শেষ ম্যাচ ছিল! ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহকে অপ্রীতিকর এক রেকর্ডে ফেলে যান তিনি। স্বীকৃত ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত হ্যাটট্রিক হয়েছে ৫০টি। এর মধ্যে দুটোতে জড়িয়ে মাহমুদউল্লাহর নাম। একই ফরম্যাটে দুইবার হ্যাটট্রিক করা বোলারের তৃতীয় শিকার হওয়া প্রথম এবং শেষ ক্রিকেটার এই মিডল ব্যাটার।
২০২০ সালে সাদা পোশাকেও তিক্ত সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ নেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে নাসিম শাহর হ্যাটট্রিক বল মোকাবিলা নেমেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ঝুঁকিপূর্ণ কাভার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে স্লিপে থাকা হারিস সোহেলকে ক্যাচ দেন তিনি। তার আত্মাহুতিতে টেস্টে সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিকম্যান বনে গিয়েছিলেন ১৬ বছরের নাসিম। পাকিস্তানি পেসারের প্রথম দুই শিকার ছিলেন-নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তাইজুল ইসলাম।
মাহমুদউল্লাহর হ্যাটট্রিক ভীতির শেষ নয় এখানেই। আরও এক অভিষিক্ত বোলারের হ্যাটট্রিকে জড়িয়ে আছে তার নাম। ২০২১ সালে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন নেতৃত্বে। তার দল ৪-১ ব্যবধানে পেয়েছিল ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে টানা তিন বলে ৩ উইকেট শিকার করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম বোলার হিসাবে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অজি পেসার নাথান এলিস। প্রথমে আউট করেছিলেন ৫৩ বলে ৫২ রান করা মাহমুদউল্লাহকে। পরের দুই বলে মোস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মাহেদীকে।
সবশেষ গতকাল সিলেটের মাঠে ঘটে যাওয়া ঘটনা তো সবারই জানা। সিরিজ জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ দল পুড়ে স্বপ্নভঙ্গের হতাশায়। সব এলোমেলো হয়ে যায় নুয়ান থুসারার হ্যাটট্রিকে। পরপর দুই বলে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তাওহীদ হৃদয়কে বোল্ড করেন লঙ্কান পেসার। উদযাপনের মাঝে খানিকটা উত্তেজনা ছড়ায় হৃদয়-থুসারার তর্কে। এরপরও মনোযোগ হারাননি হ্যাটট্রিক ডেলিভারির আগে। হ্যাটট্রিক বলে মাহমুদউল্লাহকে ফেলেন এলবির ফাঁদে। রিভিউ নিয়েও পার পাননি এ টাইগার ব্যাটার।