![রমজানে প্যারেন্টিং](uploads/2024/03/28/1711615663.18.jpg)
একটি শিশুকে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যাবতীয় নির্দেশনা ইসলামে রয়েছে। রোজা ও রমজানের প্রশিক্ষণও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। সবাই আশা করেন, তার সন্তান হবে আদব-আখলাক ও শিষ্টাচারে সবার সেরা। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণসাধন এবং মুক্তির কারণ হবে তার সন্তান। এমন আদর্শ সন্তানের কল্যাণ পেতে ইসলামের অনুসরণ-অনুকরণ জরুরি। ইসলামি বিধানমতো শিশুর লালন করতে পারলে এ সুফল লাভ করা সম্ভব। শিশুকে গড়ার বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অন্যতম মাস হলো পবিত্র রমজান। এ মাসে অন্যান্য কাজ একটু কমিয়ে শিশুর জীবন গঠনে চোখ রাখলে উপকৃত হওয়া সম্ভব।
রমজানে অভিভাবকের প্রথম দায়িত্ব শিশুদের রোজা রাখায় উদ্বুদ্ধ করা। রুবাই বিনতে মুআওয়েজ ইবনে আফরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার সকালে মদিনার আশপাশে আনসারদের এলাকায় (এই ঘোষণা) পাঠালেন, যে ব্যক্তির রোজা অবস্থায় সকাল শুরু করেছে, সে যেন তার রোজা পালন সম্পন্ন করে। আর যে ব্যক্তি রোজাহীনভাবে সকাল শুরু করেছে; সে যেন বাকি দিনটুকু রোজা পালন করে। এরপর থেকে আমরা আশুরার দিন রোজা পালন করতাম এবং আমাদের ছোট শিশুদেরও রোজা রাখাতাম। (বুখারি, ১৯৬০)
যে বয়সে শিশু রোজা পালনে সক্ষমতা লাভ করে; সে বয়স থেকে পিতামাতা তাকে প্রশিক্ষণমূলক রোজা রাখাবেন। শিশুদের রোজা পালনে অভ্যস্ত করে তোলার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে। কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
১. শিশুদের কাছে রোজার ফজিলত সম্পর্কিত আলোচনাগুলো তুলে ধরতে হবে।
২. রমজান আসার আগে কিছু রোজা রাখানোর মাধ্যমে অভ্যাস করাতে হবে।
৩. শুরুতে দিনের কিছু অংশে রোজা পালন করানো। ক্রমান্বয়ে সেই সময়কে বাড়িয়ে দেওয়া।
৪. একেবারে শেষ সময়ে সাহরি গ্রহণ করা।
৫. পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তাদের রোজা পালনে উৎসাহিত করা।
৬. ইফতার ও সাহরির সময় পরিবারের সদস্যদের সামনে তার প্রশংসা করা।
৭. যার একাধিক শিশু রয়েছে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করা।
৮. ক্ষুধা বেশি লাগলে ঘুম পাড়িয়ে অথবা বৈধ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা।
৯. যেসব পরিবারের শিশুরা রোজা রাখে তাদের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া।
১০. ইফতারের পর শরিয়ত অনুমোদিত ঘোরাফেরার সুযোগ দেওয়া। অথবা তারা পছন্দ করে এমন খাবার প্রস্তুত করা।
শিশুর যদি খুব বেশি কষ্ট হয়, তা হলে রোজাটি পূর্ণ করার ব্যাপারে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। যাতে তার মাঝে ইবাদতের প্রতি অনীহা না আসে অথবা তার মাঝে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি না করে অথবা তার অসুস্থতা বৃদ্ধির কারণ না ঘটায়। শিশুদের খাবারে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। রোজাদার শিশুদের বাসায় বানানো খাবার খেতে দিতে হবে। দুর্বলতা দূর করতে প্রচুর পানি পানের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, শাকসবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়াতে হবে।
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক