ঢাকা ৩১ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

রমজানে প্যারেন্টিং

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
রমজানে প্যারেন্টিং
শিশু সন্তানদের ইসলামি পোশাক পরাচ্ছেন মা-বাবা। ইন্টারনেট

একটি শিশুকে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যাবতীয় নির্দেশনা ইসলামে রয়েছে। রোজা ও রমজানের প্রশিক্ষণও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। সবাই আশা করেন, তার সন্তান হবে আদব-আখলাক ও শিষ্টাচারে সবার সেরা। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণসাধন এবং মুক্তির কারণ হবে তার সন্তান। এমন আদর্শ সন্তানের কল্যাণ পেতে ইসলামের অনুসরণ-অনুকরণ জরুরি। ইসলামি বিধানমতো শিশুর লালন করতে পারলে এ সুফল লাভ করা সম্ভব। শিশুকে গড়ার বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অন্যতম মাস হলো পবিত্র রমজান। এ মাসে অন্যান্য কাজ একটু কমিয়ে শিশুর জীবন গঠনে চোখ রাখলে উপকৃত হওয়া সম্ভব। 

রমজানে অভিভাবকের প্রথম দায়িত্ব শিশুদের রোজা রাখায় উদ্বুদ্ধ করা। রুবাই বিনতে মুআওয়েজ ইবনে আফরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার সকালে মদিনার আশপাশে আনসারদের এলাকায় (এই ঘোষণা) পাঠালেন, যে ব্যক্তির রোজা অবস্থায় সকাল শুরু করেছে, সে যেন তার রোজা পালন সম্পন্ন করে। আর যে ব্যক্তি রোজাহীনভাবে সকাল শুরু করেছে; সে যেন বাকি দিনটুকু রোজা পালন করে। এরপর থেকে আমরা আশুরার দিন রোজা পালন করতাম এবং আমাদের ছোট শিশুদেরও রোজা রাখাতাম। (বুখারি, ১৯৬০)

যে বয়সে শিশু রোজা পালনে সক্ষমতা লাভ করে; সে বয়স থেকে পিতামাতা তাকে প্রশিক্ষণমূলক রোজা রাখাবেন। শিশুদের রোজা পালনে অভ্যস্ত করে তোলার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে। কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

১. শিশুদের কাছে রোজার ফজিলত সম্পর্কিত আলোচনাগুলো তুলে ধরতে হবে। 
২. রমজান আসার আগে কিছু রোজা রাখানোর মাধ্যমে অভ্যাস করাতে হবে। 

৩. শুরুতে দিনের কিছু অংশে রোজা পালন করানো। ক্রমান্বয়ে সেই সময়কে বাড়িয়ে দেওয়া। 

৪. একেবারে শেষ সময়ে সাহরি গ্রহণ করা। 

৫. পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তাদের রোজা পালনে উৎসাহিত করা। 

৬. ইফতার ও সাহরির সময় পরিবারের সদস্যদের সামনে তার প্রশংসা করা। 

৭. যার একাধিক শিশু রয়েছে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করা। 

৮. ক্ষুধা বেশি লাগলে ঘুম পাড়িয়ে অথবা বৈধ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা। 

৯. যেসব পরিবারের শিশুরা রোজা রাখে তাদের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া। 

১০. ইফতারের পর শরিয়ত অনুমোদিত ঘোরাফেরার সুযোগ দেওয়া। অথবা তারা পছন্দ করে এমন খাবার প্রস্তুত করা।  

শিশুর যদি খুব বেশি কষ্ট হয়, তা হলে রোজাটি পূর্ণ করার ব্যাপারে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। যাতে তার মাঝে ইবাদতের প্রতি অনীহা না আসে অথবা তার মাঝে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি না করে অথবা তার অসুস্থতা বৃদ্ধির কারণ না ঘটায়। শিশুদের খাবারে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। রোজাদার শিশুদের বাসায় বানানো খাবার খেতে দিতে হবে। দুর্বলতা দূর করতে প্রচুর পানি পানের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, শাকসবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়াতে হবে। 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

গোসলের ফরজ কয়টি?

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪১ এএম
গোসলের ফরজ কয়টি?
গোসল সেরে পারফিউম মাখছেন এক ব্যক্তি। ছবি: ইন্টারনেট

ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। অপরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে না বলে হাদিসে হুঁশিয়ারি এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে শুধু পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে।’ (ফাইজুল কাদির, হাদিস: ৩০৬৫) 

পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম গোসল করা। গোসলে তিনটি ফরজ কাজ রয়েছে। তিনটি ফরজ যথাযথ পালন না করলে গোসল সঠিক হবে না। তিনটি ফরজ হলো—

১. গড়গড়াসহকারে কুলি করা
আমাদের দাঁতের ফাঁকে অনেক সময় খাবার বা উচ্ছিষ্ট আটকে থাকে, গলায় থুতু বা কফ লেগে থাকে, যা স্বাভাবিক কুলির দ্বারা দূর হয় না। তাই তা দূর করতে প্রয়োজন গড়গড়া করে কুলি করা। রাসুলুল্লাহ (সা.)ও এরূপ করেছেন। মায়মুনা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ফরজ গোসলের অংশ হিসেবে কুলি করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২৫৭)

২. নাকে পানি দেওয়া
ভালো করে নাকের ভেতর পানি না দিলে পানি প্রবেশ করে না। নাকের ভেতরে থাকা ময়লাও পরিষ্কার হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) গোসলের সময় নাকে পানি দিয়েছেন। মায়মুনা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) গোসলের সময় নাকে পানি দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২৬৫)

৩. সমস্ত শরীর ধৌত করা
গোসলের উদ্দেশ্য হলো সমস্ত শরীর ভালোভাবে ধৌত করা। শরীরে পানি ঢালার সময় প্রত্যেকটা অঙ্গে পানি পৌঁছানো। শরীরের কোনো একটি অংশ যদি না ভিজে, তা হলে গোসল পরিপূর্ণ হবে না। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন গোসল করতেন, তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২১৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

ফজর নামাজের শেষ সময় কখন?

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম
ফজর নামাজের শেষ সময় কখন?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত নামাজরত ব্যক্তির ছবি।

মুমিন বান্দাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত ফজর নামাজ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘জোহরের নামাজে যাওয়ার কী সওয়াব, তা যদি মানুষ জানত, তাহলে এর জন্য তারা অবশ্যই সবার আগে যেত। এশা ও ফজর নামাজ (জামাতে) আদায়ে কী ফজিলত, তা যদি তারা জানত তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৫৪) 

ফজর নামাজের সময় শুরু হওয়ার পর থেকে সূর্য উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় ফজর নামাজ পড়া যাবে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যক্তি; যাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উমর (রা.) আমাকে বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না ওঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৮১)

ফজরের নামাজ অন্ধকারে নয়; কিছুটা আলোতে পড়া উত্তম। জায়দ ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, ‘তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাহরি খেয়ে ফজরের নামাজে দাঁড়িয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দুইয়ের মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ বা ষাট আয়াত তেলাওয়াত করা যায়।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭৫)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে সূর্য ওঠার আগে ফজর নামাজের এক রাকাত পায়, সে ফজর নামাজ পেল। যে সূর্য ডুবার আগে আসরের নামাজের এক রাকাত পেল, সে আসরের নামাজ পেল।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭৯) 

মোটকথা, ফজরের নামাজের জন্য এমন সময়ে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, যাতে করে ফজরের সুন্নত সুন্দরভাবে আদায় করা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো নফল নামাজকে ফজরের দুই রাকাত সুন্নতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ১১৬৯)

লেখক: আলেম ও গবেষক

 

আশুরা কী ও কেন

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০২:১৯ পিএম
আশুরা কী ও কেন
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত আরবিতে ইয়াওমু আশুরা লেখা ছবি

আরবি প্রথম মাস মুহাররম। মুহাররম অর্থ সম্মানিত। আল্লাহতায়ালার কাছে সম্মানিত চার মাসের একটি মুহাররম। এ মাসের দশ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকেই এই দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। যুগে যুগে বহু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে এই দিনে। প্রথম মানুষ ও নবি আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয় এই দিনে। এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। আবার জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। বহু ইতিহাস রচিত হয়েছে আশুরার দিনে। এই যেমন—ইবরাহিম (আ.)-এর জন্ম। নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তিলাভ। প্লাবন শেষে নুহ (আ.)-এর নৌকা যুদি পাহাড়ে অবস্থান। এই আশুরাতেই মুসা (আ.) আসমানি কিতাব ‘তাওরাত’ লাভ করেন। ফেরাউন ও তার দলবল নীল দরিয়ায় ডুবে মরেছিল। (বুখারি, ৩৩৯৭, মুসলিম, ১১৩৯)।

পবিত্র আশুরার অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা)-এর কারবালায় সপরিবারে শাহাদাতবরণ। হুসাইন (রা.) মহানবি (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্রই ছিলেন না, তিনি ছিলেন তাঁর আদর্শের প্রতীক। আল্লাহতায়ালার রহমতে সিক্ত ও বিজয়ের রঙে রঙিন এই আশুরা মুমিনদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনে রয়েছে বিশেষ আমল।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহানবি (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় পৌঁছেন, তখন তিনি দেখলেন মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, এই দিনটি অনেক বড়। এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আর ফেরাউন ও তার বাহিনীকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা (আ.) রোজা রাখতেন। তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করি। তাদের উত্তর শুনে নবি (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে বেশি হকদার। অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি, ৩৩৯৭)


আশুরার রোজার দ্বারা বান্দার বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি।’ (ইবনে মাজাহ, ১৭৩৮)
দশই মুহাররম বা আশুরার দিন ইহুদিরাও রোজা রাখে। তাই নবিজি আশুরার রোজার সঙ্গে আরও একটি রোজা রাখতে বলেছেন। ইমাম শাফি ও তাঁর সাথিরা, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, ‘আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তোমরা ৯ ও ১০ (এই দুই দিন) রোজা পালন করো এবং (এক্ষেত্রে) ইহুদিদের বিপরীত করো।’ (তিরমিজি, ৭৫৫)


অনেকে কারবালার ঘটনাকে স্মরণ করে মর্সিয়ায় ডুবে থাকে। ‘হায় হোসাইন, হায় হোসাইন’ বলে মাতম করে। নিজেকে রক্তাক্ত করে। এতে কোনো উপকার নেই; বরং গুনাহ হয়। শোকে বিলাপ করা, কাপড় ছেঁড়া, শরীর ক্ষত-বিক্ষত করা, আনুষ্ঠানিক শোক মিছিল ও শোক দিবস পালন করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আমাদের করণীয় হলো নফল রোজা ও নামাজের মাধ্যমে দোয়া করা। নিজের ও পুরো মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা করা। (বুখারি, ১২৯৬)।

এছাড়া এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক ভিত্তিহীন কথারও প্রচলন রয়েছে। যেমন—এদিন ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ঈসাকে (আ.) আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলে থাকেন, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। (আল আসারুল মারফুয়া, ৬৪/১০০)

 

লেখক: ইমাম ও খতিব, কসবা জামে মসজিদ

শরীরে ট্যাটু আঁকার ভয়াবহ পরিণতি

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম
শরীরে ট্যাটু আঁকার ভয়াবহ পরিণতি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ট্যাটু আঁকা হাতের ছবি

বর্তমানে একশ্রেণির মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ট্যাটু আঁকা বা উল্কি অঙ্কন। অনেকে না জেনে ফ্যাশন হিসেবে শরীরে ট্যাটু আঁকে। ট্যাটু আঁকা বা উল্ক অঙ্কন সম্পর্কে ইসলামের বিস্তারিত বিধান তুলে ধরা হলো—

আল্লাহ মানুষকে সুন্দর অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে।’ (সুরা তিন, আয়াত: ৪)। তবে একশ্রেণির মানুষ এই সুন্দরকে অসুন্দর করছে। অসুন্দরের চর্চায় হারামে জড়াচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকেই কিছু মানুষ শরীরে ট্যাটু আঁকত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেও এর প্রচলন ছিল। একে ইংরেজিতে ট্যাটু, বাংলায় উল্কি এবং আরবিতে ওয়াশম বলে। মানবদেহের ত্বকে সুই বা এ জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে বাহারি রঙের নকশা করার নামই উল্কি বা ট্যাটু। ট্যাটু সাধারণত স্থায়ী হয় অথবা সহজে মুছে ফেলা যায় না। ইসলামে ট্যাটু করা হারাম। 

আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা শরীরে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়িয়ে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।’ (তিরমিজি, ২৭৮২)
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘যেসব নারী নকল চুল ব্যবহার করে, যারা অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয় এবং যেসব নারী উল্কি আঁকে ও যাদের জন্য করে; রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (তিরমিজি, ১৭৫৯)


ট্যাটুতে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি আঁকা হয়, যা গুনাহের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা প্রাণীর ছবি আঁকে, তাদের কেয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাদের বলা হবে, তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্মা ও জীবন দাও।’ (বুখারি, ৪৭৮৩)
শরীরের মধ্যে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃতির নামান্তর। রাসুলুল্লাহ (সা.) ট্যাটু করতে নিষেধ করেছেন। ট্যাটুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিসম্পাত করেছেন। 


কৃত্রিম উপায়ে অঙ্গে বিকৃতি সাধন করা গুনাহের কাজ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতি হয় এমন যেকোনো কাজই ইসলামে নিষেধ। একইভাবে ট্যাটু করতে গিয়ে পর্দার বিধান পুরোপুরি  লঙ্ঘিত হয়, যা শরিয়তের বিধান অনুযায়ী অপরাধের শামিল। যেখানে সর্বদা নারীর অঙ্গ ঢেকে রাখা আবশ্যক, সেখানে একজন নারীর অঙ্গে  ট্যাটু করে মানুষকে দেখিয়ে বেড়ানো মারাত্মক গুনাহের কাজ। এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। 


এটি একটি অভিশপ্ত প্রথা, যা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা বেশির ভাগ ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে হারাম। তারা বলেছেন, যেসব উপায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট অঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়, তার সবই নিষিদ্ধ। আলাদা চুল লাগানো, ভ্রু প্লাক করা, চোখে আলাদা পালক লাগানো ইত্যাদি ইসলাম অনুমোদন করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেসব নারী সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে এবং যেসব নারী ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহতায়ালা তাদের অভিসম্পাত করেছেন।’ (বুখারি, ৫৬০৪)

লেখক: শিক্ষক, মারকাজুল কোরআন মাদরাসা, শ্রীপুর

রোগী দেখার সুন্নত পদ্ধতি

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
রোগী দেখার সুন্নত পদ্ধতি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত রোগী দেখার ছবি

আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ অসুস্থ হলে আমরা অনেকেই তাদের দেখতে যাই। খোঁজখবর নিই। এই দেখতে যাওয়া ও খোঁজখবর নেওয়ার কিছু সুন্নত পদ্ধতি রয়েছে। এখানে কয়েকটি আলোচনা করা হলো

অজু অবস্থায় যাওয়া: অজু অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এতে কল্যাণ পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তাকে জাহান্নাম থেকে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে।’ (আবু দাউদ, ৩০৯৭)

রোগীর খোঁজখবর নেওয়া: রোগীকে দেখতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া সুন্নত। অবস্থা বুঝে মাথায় হাত বুলিয়ে কুশল জানা সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শুশ্রুষার পূর্ণতা হলো রোগীর কপালে বা শরীরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করা, কেমন আছেন?’  (তিরমিজি, ৪/৩৩৪) 
রোগীর কাছে বেশিক্ষণ অবস্থান না করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোগী দেখার সময় হলো উটের দুধ দোহন পরিমাণ। আরেক বর্ণনায় এসেছে, রোগী দেখার উত্তম পন্থা হলো তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।

রোগীকে খেতে দেওয়া: রোগী কিছু খেতে চাইলে এবং তা তার জন্য ক্ষতিকর না হলে খেতে দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোগী যদি কিছু খেতে চায়, তবে তাকে খেতে দেওয়া উচিত।’ (বুখারি, ১০/১১৮)

উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা: ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো রোগীর পাশে কম সময় বসা এবং উঁচু আওয়াজে কথা না বলা।

দোয়া করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো রোগীর কাছে গিয়ে নিচের দোয়াটি সাতবার পাঠ করলে মৃত্যুরোগ ছাড়া সব রোগ থেকে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। দোয়াটি হলো—বাংলা উচ্চারণ: ‘আস আলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আই ইয়াশফিয়াকা।’ বাংলা অর্থ: আমি মহান আরশের প্রভু মহামহিম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তোমাকে রোগমুক্তি দেন। (আবু দাউদ, ৩১০৬)

লেখক: মাদরাসা শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক