ভাষা শহিদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ফুল কেনা শুরু করেন গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আর ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর ও প্রভাতফেরি শেষে শহিদ বেদিতে পুষ্প অর্পণ করা হয়। এ শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে নরসিংদিতে এক দিনের জন্য অস্থায়ী ফুলের ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন অনেকেই।
সরেজমিনে নরসিংদীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, নরসিংদী পৌর শহরের স্টেশন রোড ও মাধবদী পৌর শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ীসহ অনেকে শখের বশে গোলাপ, রজনীগন্ধা, ফুলের রিংসহ বিভিন্ন ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
এ সময় কথা হয় ১২ বছর ধরে বিশেষ দিবসগুলো উপলক্ষে শখের বশে ফুল বিক্রি করা মানিক মিয়ার সঙ্গে, তিনি বলেন ‘গত সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার শাহবাগ থেকে ফুল কিনে এনেছি। অন্য ফুলের দাম তুলনামূলক স্বাভাবিক আছে। কিন্তু গতবারের চেয়ে এবার গোলাপ ফুলের দাম চারগুণ বেশি। একটি গোলাপের দাম পড়েছে গড়ে ৩০ টাকারও বেশি। ফুলের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা কম। এবার লাভবান হতে পারব না।’
ফুটপাতে নুডলস বিক্রি করেন প্রদীপ শাহ। কিন্তু শহিদ দিবস উপলক্ষে নুডলস বিক্রি না করে তিনি ফুল নিয়ে বসেছেন মাধবদী পোস্ট অফিসের সামনের ফুতপাতে।
জানতে চাইলে তিনি খবেরর কাগজকে বলেন, ‘বছরে এক দিনেই একুশে ফেব্রুয়ারি আসে, আমার ফুল বিক্রি করতে ভালো লাগে। আমিও শাহবাগ থেকে ফুল কিনে এনেছি। তবে গতবারের চেয়ে এবার ফুলের দাম বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। শাহবাগের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার নাকি বাজারে ফুলের সংকট রয়েছে। তাই বেশি দামেই ফুল কিনে নিয়ে এসেছি। আজ (মঙ্গলবার) সকাল ও বুধবার সকাল পর্যন্ত আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে বিক্রি করব। তবে ফুলের দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হওয়া নিয়ে অনিশ্চিতায় আছি।’
জুয়েল মিয়া পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। বিশেষ দিনগুলো ফুতপাতে ফুলের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘বছরে একবার ফুলের দোকানে কাজ করি। ফুল দিয়ে বুকেট বানাই, রজনীগন্ধার স্টিক বানাচ্ছি বিক্রি করার জন্য।’
শখের বশে শহিদ দিবস ফেব্রুয়ারিসহ বিশেষ দিনগুলোতে ফুল বিক্রি করেন রুবেল মিয়া। তিনি জানান, ঢাকার শাহবাগ ও আগারগাঁও থেকে ফুল এনেছেন। কিন্তু এবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফুলের দাম বেশি রেখেছেন। তিনি লাভবান হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
মাধবদী বাজারে কসমেটিকসের ব্যবসা করেন ইমরান হোসেন। কিন্তু অন্য অনেকের মতো তিনি তার নিয়মিত ব্যবসা বন্ধ রেখে শহিদ দিবস উপলক্ষে এক দিনের জন্য ফুলের ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি এলে অনেক আনন্দ লাগে। সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ফুল কিনে নিয়ে যান ভাষা শহিদদের সম্মান জানানোর জন্য। আমিও আনন্দের সঙ্গে ফুল বিক্রি করি। একটি রজনীগন্ধা স্টিক দেড় শ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারছি না। কারণ এবার সব ফুলের দাম চড়া।’
স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ দিনগুলোতে পাইকারি বাজারে ফুলের দাম বেড়ে যায়। কারণ হিসেবে তারা জানান, শখের বশে অনেকেই এক দিনের জন্য ফুল ব্যবসায় আসেন। তারা লাভ-লোকসান বুঝেন না। সেজন্য যারা নিয়মিত ফুলের ব্যবসা করেন তাদেরও বেশি দামে ফুল কিনে নিয়ে আসতে হয়।
মাধবদী স্কুল সুপার মার্কেটের পুরোনো ফুল ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া খবরের কাজকে বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের বাজার অনেক চড়া থাকে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যসহ অন্য পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দামও বেড়েছে। প্রতি বছরই একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিশেষ দিনগুলোকে ঘিরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চড়া দামে ফুল বিক্রি করেন। তাই আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ি।’
কয়েকজন অভিভাবককে তাদের সন্তানদের ফুল কিনে দিতে দেখা যায়। এ সময় রবিন মিয়া ও আবু কালাম ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজের। তারা জানান, দুজনের শেখেরচর বাজারে ব্যবসা করেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহিদদের সম্মানে শহিদ মিনারের বেদিতে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন। সেজন্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে ফুল কিনতে এসেছেন।